বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫ ।। ২২ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১৩ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :

জুলাই ঘোষণাপত্রে উপেক্ষিত শাপলা ট্রাজেডি, ক্ষুব্ধ ইসলামপন্থীরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

গতকাল ৫ আগস্ট পালিত হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি। এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে এই ঘোষণাপত্র নিয়ে ইসলামপন্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।  ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যা এবং ২০২১ সালের মোদিবিরোধী আন্দোলনের শহীদদের প্রসঙ্গ অনুপস্থিত থাকায় ক্ষুব্ধ ইসলামপন্থীরা। 

এই ইস্যুতে হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামি ধারার রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় সবাই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ড. ইউনূসের পাঠ করা ঘোষণাপত্রে শাপলা গণহত্যা বা এর বিচার প্রসঙ্গ না থাকাটা নিঃসন্দেহে একটি সচেতন সিদ্ধান্ত। অনেকেই মনে করছেন, এটি জাতীয় স্মৃতিকে আড়াল করার অপচেষ্টা।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বিবৃতিতে সংগঠনের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান বলেছেন, মূলত শাপলা চত্বরের গণপ্রতিরোধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়েই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আলেম-ওলামা, মাদরাসা শিক্ষার্থী ও তৌহিদি জনতা দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অকাতরে রক্ত দিয়েছে; জান দিয়েছে। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের পঠিত জুলাই ঘোষণাপত্রে শাপলা গণহত্যার বিচারের প্রতিশ্রুতি দূরের কথা, কোনো উল্লেখই নেই! ঘোষণাপত্র পাঠকালে হেফাজত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও এমনটি হয়েছে। ফলে এটি যে সচেতনভাবে করা হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। ওলামায়ে কেরাম ও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা এতে বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমরা হতাশ ও বিস্মিত! সামনে দিন আরো আছে। এই উপেক্ষার বিষয়টি অবশ্যই আমাদের মনে থাকবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও পীর সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম এই ঘোষণাপত্রকে ইতিহাসের প্রতি বৈষম্য হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এত গুরুত্বপূর্ণ দলিলের জন্য আগে আমাদের মতামত নেওয়া হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, ঘোষণাপত্রে ৭১, ৭৫ ও ৯০-এর আন্দোলনের কথা থাকলেও ১৯৪৭-এর অধ্যায়, শাপলা ও পিলখানা হত্যাকাণ্ড এবং আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতনের উল্লেখ নেই।। ইসলামী আন্দোলন মনে করে, এতে ইতিহাসের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ঘোষণাপত্র পাঠ, ঘোষণা আয়োজন ও এক দলের সঙ্গে আলাপের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা প্রমাণ করে ইসলামপন্থীদের অবদান অবজ্ঞা করা হয়েছে। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে রক্ত দেওয়া আলেম-ওলামা, মাদরাসা শিক্ষক-ছাত্র, প্রবাসী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ভূমিকাও উপেক্ষিত। ১৯৪৭-এর আজাদি, শাপলা গণহত্যা ও পিলখানা ট্র্যাজেডির মতো অধ্যায় বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ এগুলোই বাংলাদেশে স্বৈরাচার পতনের ধারাবাহিকতায় সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। এ উপেক্ষা ইতিহাসের প্রতি চরম অবিচার।

ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্রকে অপূর্ণাঙ্গ বলে সংশোধনের দাবি জানিয়ে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের এক বিবৃতিতে বলেন, জুলাই সনদে ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড, ২০১৩ সালের শাপলা ট্র্যাজেডি, ২০১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনের দমন এবং ২০২১ সালের মোদিবিরোধী বিক্ষোভে নিহতদের উল্লেখ নেই। এসব সংগ্রামই ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের বীজ বপন করেছিল। তারা বলেন, এসব সংশোধন ছাড়া ঘোষণাপত্র অপূর্ণাঙ্গ এবং অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী হবে। আমরা অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র সংশোধনের দাবি জানাই। 

এ প্রসঙ্গে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামরে পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দলটির মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে প্রত্যাশিত অন্তর্ভুক্তিতা নেই। পিলখানা ও শাপলা ট্রাজেডি এই ঘোষণাপত্রে উপেক্ষিত হওয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি এবং গুরুত্ব বিবেচনায় এ দুটি বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়া উচিত হয়নি বলে আমরা মনে করি। একই সাথে ঘোষণাপত্রে জুলাই শহীদদের জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়ার অভিপ্রায়কে আমরা দলীয়ভাবে স্বাগত জানাই।

জুলাই ঘোষণাপত্রে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির সারওয়ার কামাল আজিজী ও মহাসচিব মুসা বিন ইজহার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে ২০১০ সালের পিলখানা ট্রাজেডি, ২০১৩ সালের শাপলা গণহত্যা, ২০২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলন ও সর্বশেষ জুলাই অভ্যুত্থানে আলেম-উলামা, মাদরাসার ছাত্র ও ইসলামি দলগুলোর অবদানকে সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার ফলে এ ঘোষণাপত্রে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ