সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য-সমঝোতা কতদূর? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী উত্তর-এর সমাবেশ  আদর্শিক বিরোধে গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত নয় : মাহফুজ আলম ইসলামি চার রাজনৈতিক দলের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক বন্দোবস্তের স্থায়ী বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের প্রতিবাদে চবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়ব আহমেদ সিয়াম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

অন্তবর্তী সরকার কর্তৃক ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ের অনুমোদনের প্রতিবাদ ও প্রত্যাহারের দাবিতে “চবিয়ান দ্বীনি পরিবার”-এর ব্যানারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।

সোমবার (২১ জুলাই ২০২৫)বেলা সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, “আমরা ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের বিরোধিতা করি। এটা আমাদের দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকী। এটা আমাদের নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি, জাতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের জন্য গলার কাঁটা, বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে। এই মানবাধিকার কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করে আলাদা একটা পূর্ব তিমুর কায়েমে কাজ করবে। গাজায় গণহত্যার সময় এই কমিশন কী করে? 

তিনি আরও বলেন, মানবাধিকার কমিশন মূলত অধিকারের মোড়কে এলজিবিটি, ট্রান্সজেন্ডারের মতো বিকৃতি ফেরী করে। দুই দিন পরে এই কমিশন মৃত্যুদণ্ডের আইন বাতিলের কথা বলবে। ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইনগুলো বাতিল করতে বলবে। আজ চবিয়ান দ্বীনি পরিবার ক্ষুদ্র পরিসরে দাঁড়িয়েছে। আমি সকল ক্রিয়াশীল সংগঠনকে এই মানবাধিকার কমিশন অফিসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে আহবান জানাবো। যখন সিরাজুদ্দৌলা আর ক্লাইভের যুদ্ধ চলছিলো; সাধারণ মানুষ ভেবেছিলো - হয় তো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে নবাবের কোনো ঝামেলা চলছে। আমরা তো খেয়ে পড়ে ঠিকই আছি। না আপনারা ঠিক নাই। আপনাদের আইডেন্টিটি, সার্বভৌমত্ব, মূল্যবোধ হুমকীর মুখে।

সমাবেশে চবিয়ান দ্বীনি পরিবারের মুখপাত্র সৈয়ব আহমেদ সিয়াম বলেন, ঢাকা থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন কার্যালয় প্রত্যাহারের দাবীর যৌক্তিকতা হিসেবে আমরা চারটি সমস্যা তুলে ধরছি:

এক. সার্বভৌমত্বগত সমস্যা:
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় দেশের অভ্যন্তরীণ নানান বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে। পররাষ্ট্রনীতিতে আমাদের স্বকীয়তা থাকবে না। মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে পার্বত্য চট্টগ্রাম অস্থিতিশীল হবে। পাহাড়ের সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আরো বেশি সক্রিয় হয়ে উঠবে। দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র পরিবর্তন তথা পরিকল্পিত ইহুদীবাদী খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠন তরান্বিত হবে। 

দুই. মূল্যবোধগত সমস্যা:
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় এলজিবিটিকিউ (সমকামিতা, ট্রান্সজন্ডার ইত্যাদি) এবং পতিতাবৃত্তির স্বীকৃতি ও ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে থাকে। যা বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক মূল্যবোধ ও প্রচলিত আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। বিশ্ববিদ্যালয় সহ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষা সিলেবাসেও তারা এসব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করবে। যার কারণে আমরা শিক্ষার্থীরা খুবই উদ্বিগ্ন।

তিন. আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন:
যেসব দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপিত হয়েছে সেসব দেশের আন্তর্জাতিক স্ট্যাটাস অত্যন্ত নিম্নমানের। বাংলাদেশে এই অফিস স্থাপিত হওয়ায় দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে! সাধারণত যুদ্ধবিদ্ধস্ত ও চরম অস্থিতিশীল দেশগুলোতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপিত হয়ে থাকে। অথচ বাংলাদেশ ওরকম কোনো অবস্থায় নেই।

চার. মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি হ্রাস:
ধর্ষক কিংবা খুনী যাদের শাস্তি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে, এসব অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস থেকে সরকারের উপর চাপ আসবে। ফলে দেশে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে এবং ফরীয়াদীরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে!"

সমাবেশে চবিয়ান দ্বীনি পরিবারের শূরা সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা জানিয়ে দিতে চাই, জুলাইয়ের শহীদদের সাথে, এদেশের মাটি আর মানুষের সাথে গাদ্দারী করবেন না। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস তো সেই সব দেশে থাকে, যেগুলো যুদ্ধবিধ্বস্ত। জাতিসংঘের সৈন্যরা গত ১০ বছরে ৬০ হাজার ধর্ষণ করেছে। আমরা থাকতে, আমাদের শরীরে শেষ রক্তবিন্দু থাকতে এই কমিশনের অফিস দেশে রাখতে দিবো না, ইনশাআল্লাহ। যদি আমাদের মূল্যবোধকে উপেক্ষা করে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়, এইদেশে আবার জুলাই নেমে আসবে, ইনশাআল্লাহ। শহীদের রক্তের ওপর ক্ষমতায় বসে দেশের মানুষের মূল্যবোধের সাথে আপনারা গাদ্দারী করতে পারেন না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা ইন্টেরিয়মকে জানিয়ে দিতে চাই, এই দেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস স্থায়ী হতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে স্থায়ী হতে হবে। হয় আমরা থাকবো, না হয় ওই জাতিসংঘের অফিস থাকবে। দুটো একসাথে থাকবে না, ইনশাআল্লাহ।"

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা রঙিন কাগজে “মানবাধিকারের দোকানদারি, বন্ধ কর তাড়াতাড়ি”, “রক্তমাখা হাতে মানবাধিকারের বাণী? চলবে না এই ভন্ডামী”, “গাজায় ঝরে রক্ত, জাতিসংঘ রংধনুতে মত্ত”, “নাম মানবতা, কাজ কলঙ্কতা”, “জাতিসংঘের মুখোশ ছিঁড়ো, পাপের পথটা বন্ধ করো” ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

এসময় তারা “আওয়াজ উঠা বাংলাদেশ, ইস্ট ইন্ডিয়া ছাড়বে দেশ”, ‘কমিশন না মূল্যবোধ? মূল্যবোধ, মূল্যবোধ”, “ওয়াশিংটন না ঢাকা? ঢাকা, ঢাকা” প্রভৃতি স্লোগান দেন। বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য দোয়া ও পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচীর হুঁশিয়ারির মাধ্যমে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ