ভারতে যৌতুকপ্রথা এখনো এক ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। প্রতিনিয়ত এই কালচক্রে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার নারী, প্রাণও যাচ্ছে অনেকের। আধুনিক ও উন্নত সমাজব্যবস্থার পথে অন্যতম বড় অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত এই প্রথা রোধে আইন ও সচেতনতা কার্যক্রম থাকলেও তা দৃশ্যমান ফল দিচ্ছে না।
ভারতের জাতীয় মহিলা কমিশনের (NCW) সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ২০২২ সালে যৌতুকের বলি হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ হাজার ৪৫০ জন নারী। রিপোর্টটি ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (NCRB)–এর তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, যৌতুক-সম্পর্কিত নারীর মৃত্যুর শীর্ষে রয়েছে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, যেখানে এক বছরে প্রাণ গেছে ২ হাজার ২১৮ জনের। দ্বিতীয় অবস্থানে বিহার—সেখানে ১ হাজার ৫৭ জন। এরপর রয়েছে মধ্যপ্রদেশ (৫১৮ জন), দক্ষিণের রাজ্যগুলো (৪৪২ জন), পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, ও ঝাড়খণ্ড।
যৌতুকের কারণে নারী নির্যাতনের ঘটনা এখনো বহুলসংখ্যক। ২০২৩ সালে যৌতুকের জেরে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪ হাজার ৭৯৭ জন নারী, আর ২০২৪ সালের প্রথমার্ধেই মহিলা কমিশনে অভিযোগ জমা পড়েছে ৪ হাজার ৩৮৩টি। একই বছরে যৌতুক-সম্পর্কিত ২৯২টি মৃত্যুর অভিযোগও রেকর্ড হয়েছে।
কমিশনের রিপোর্টে আরও দেখা যায়, ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গড় মৃত্যু সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার নারী প্রতি বছর।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—এই সব মামলার বিচারিক অগ্রগতি। রিপোর্ট বলছে, জমা পড়া মামলার মধ্যে মাত্র ৬৪ শতাংশে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, আর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার মাত্র ১০ শতাংশের নিচে, কিছু রাজ্যে তা ১ থেকে ২ শতাংশ মাত্র।
জাতীয় মহিলা কমিশন মনে করছে, প্রশাসনের গা ছাড়া মনোভাব, বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতি এবং সামাজিক অসচেতনতা—সব মিলিয়ে যৌতুকবিরোধী প্রচেষ্টাগুলো এখনো কার্যকর হয়ে ওঠেনি।
এনএইচ/