ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের আগ্রাসন থামার কোনো লক্ষণ নেই। চলমান বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৯ হাজার। হাজার হাজার আহত ও বাস্তুচ্যুত মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই অবস্থায় আরও এক ভয়াবহ পরিকল্পনার তথ্য প্রকাশ পেয়েছে—যা গোটা গাজাকে ফিলিস্তিনিদের শূন্য করে ‘ইহুদি বাণিজ্যিক নগরী’তে রূপান্তরের পরিকল্পনা।
সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ঘোষণা দিয়েছেন, রাফাহ শহরের ধ্বংসস্তূপের ওপর একটি তথাকথিত ‘মানবিক শহর’ গড়ে তোলা হবে। প্রাথমিকভাবে সেখানে ৬ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থান দেওয়া হবে এবং পরে ২১ লাখ গাজাবাসীকে পুরোপুরি স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।
এই পরিকল্পনার লক্ষ্য শুধু স্থানান্তর নয়, বরং গাজার ভৌগোলিক ও সামাজিক কাঠামোকে পুরোপুরি বদলে দেওয়া। তবে এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
এর চেয়েও বিস্ফোরক প্রস্তাব এসেছে ইসরায়েলি সংসদ ‘নেসেট’-এর ‘গুশ কাতিফে ইহুদি উপস্থিতি পুনরুদ্ধার’ কমিটির আলোচনায়। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে—গাজা ফিলিস্তিনিদের থেকে পুরোপুরি খালি করে সেখানে গড়ে তোলা হবে একটি ‘হাই-টেক নগরী’, যেখানে থাকবে কেবল ইহুদিদের জন্য বিলাসবহুল আবাসন, মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থা এবং উপকূলে কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ। পরিকল্পনার নাম—মধ্যপ্রাচ্যের হংকং।
এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের নেপথ্যে রয়েছে কট্টর ইহুদি বসতি স্থাপনকারী গোষ্ঠী ‘গুশ কাতিফ রেসিডেন্টস ফোরাম’ ও ‘রিটার্ন অ্যান্ড ভিক্টরি’। তারা ২০০৫ সালে গাজা থেকে ইসরায়েলি বসতিগুলোর প্রত্যাহারকে ‘ভুল’ দাবি করে সেই বসতিগুলো পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে এগোচ্ছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজার উত্তর, কেন্দ্র এবং দক্ষিণে তিনটি প্রধান অঞ্চলজুড়ে পুনরায় বসতি গড়া হবে। সেখানে প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে পুনর্বাসনের লক্ষ্য রয়েছে। গাজার সব বিদ্যমান অবকাঠামো ধ্বংস করে সেখানে নতুন করে নির্মিত হবে শুধু ইসরায়েলিদের জন্য উপযোগী একটি হাই-টেক শহর।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার ও অবিস্ফোরিত বোমা সরাতে সময় লাগবে তিন বছর। এসব ধ্বংসাবশেষ ব্যবহার করা হবে উপকূলের কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণে। প্রাথমিক অবকাঠামো তৈরি হতে সময় লাগবে সাত বছর এবং পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ধরা হয়েছে ১৫ বছর।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এই পরিকল্পনাকে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছে। ফিলিস্তিনি আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি “শহুরে উন্নয়নের মুখোশে জাতিগত নির্মূলের একটি সুপরিকল্পিত কৌশল।”
এসএকে/