সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য-সমঝোতা কতদূর? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী উত্তর-এর সমাবেশ  আদর্শিক বিরোধে গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত নয় : মাহফুজ আলম ইসলামি চার রাজনৈতিক দলের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক বন্দোবস্তের স্থায়ী বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার

আসামে এক মাসে ৩৪০০ মুসলিম পরিবারকে উচ্ছেদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ভারতের আসাম রাজ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে চলছে ভয়াবহ দমন-পীড়ন। সেখানে নির্বাচনের পূর্বভাগে ধর্ম ও জাতিগত পরিচয়কে কেন্দ্র করে এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম সম্প্রদায় চরম দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন। শুধু গত এক মাসেই আসাম রাজ্যজুড়ে পাঁচটি অভিযানে তিন হাজার ৪০০টি মুসলিম পরিবারের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে।

ঘরবাড়ি ধ্বংসের পাশাপাশি নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন, এমনকি জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে।

সোমবার প্রকাশিত রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে, বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি এক কোণে নীল ত্রিপলের নিচে শত শত মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশু গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কেউ কয়েকদিন, কেউ কয়েক সপ্তাহ আগে বাড়িঘর হারিয়েছে। রাজ্য কর্তৃপক্ষের অভিযানে তাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আসন্ন রাজ্য নির্বাচনকে সামনে রেখে এই উচ্ছেদ অভিযান ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এই মানুষগুলো সেই হাজার হাজার পরিবারের মধ্যে পড়ে, যাদের ঘরবাড়ি সরকার ‘সরকারি জমিতে অবৈধভাবে বসবাস’ করার অভিযোগে বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। অথচ এসব মানুষের অনেকেই আসামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ‘আমাদের বলা হয় দখলদার আর বিদেশি।’ তিনি এখন তার পরিবার নিয়ে গোলপাড়া জেলার খোলা জায়গায় রোদে পুড়তে পুড়তে দিন কাটাচ্ছেন।

আসামে বিজেপি সরকারের অধীনে এই উচ্ছেদের মাত্রা গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড়। রাজ্যজুড়ে বাঙালি ভাষাভাষী মুসলিমদের ‘বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের ভারতঘনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর এই দমন-পীড়ন আরো তীব্র হয়।

অনেকেই মনে করছেন, নির্বাচনের আগে হিন্দু ভোটারদের উসকানি দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে এই অভিযান চালানো হচ্ছে।

আসাম রাজ্য ভারতের ৪,০৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ সীমান্তের মধ্যে ২৬২ কিলোমিটার ঘেঁষে আছে। এই রাজ্যে বহুদিন ধরেই অভিবাসনবিরোধী মনোভাব বিরাজ করছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু ও মুসলিম উভয় অভিবাসী স্থানীয় সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেবে। তবে বর্তমান উচ্ছেদ অভিযান এককভাবে মুসলিমদের টার্গেট করছে।

আসামের বিতর্কিত মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, যিনি বিজেপির একজন আগ্রাসী ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত, প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের পরিচয়কেই হুমকির মুখে ফেলছে।’ তিনি দাবি করেন, এই অনুপ্রবেশ বন্ধ না হলে রাজ্যের জনসংখ্যায় মুসলিমদের অনুপাত ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য দেখিয়ে তিনি বলেন, তখন মুসলিম অভিবাসীরা ছিল রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ।

২০১৯ সালে বিজেপি সরকার ভারতের নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) সংশোধন করে প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা অমুসলিম অভিবাসীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ দিলেও মুসলিমদের সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। ২০২১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে হিমন্ত শর্মার নেতৃত্বে সরকার অন্তত ৫০,০০০ মানুষকে উচ্ছেদ করেছে, যাদের বেশিরভাগই বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম। শুধু গত এক মাসেই রাজ্যজুড়ে পাঁচটি অভিযানে ৩,৪০০টি মুসলিম পরিবারের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক প্রভীন দোন্থি বলেন, ‘বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমরা, তাদের আইনি অবস্থান যাই হোক না কেন, ভারতে দক্ষিণপন্থী দলগুলোর জন্য এখন সহজ টার্গেটে পরিণত হয়েছে।’

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস বলেছে, তারা ক্ষমতায় ফিরলে এই ধ্বংসযজ্ঞের পুনর্নির্মাণ করবে এবং যারা ঘরবাড়ি ভেঙেছে, তাদের জেলে পাঠাবে। কংগ্রেসের এক আইনপ্রণেতা আকিল গগৈ বলেন, ‘এই পদক্ষেপগুলো রাজনৈতিকভাবে লাভজনক, আর তাই বিজেপি এগুলোকে কাজে লাগাচ্ছে।’

এই উচ্ছেদ অভিযানের প্রেক্ষাপটে ভারতজুড়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলিও যুক্ত হয়েছে। কাশ্মীরে হিন্দু পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত, যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করে। এরপর বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলো নিরাপত্তার অজুহাতে হাজার হাজার বাঙালি মুসলিমকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ আখ্যা দিয়ে আটক করতে শুরু করে।

বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার অপসারণের পর ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের টানাপড়েন এবং বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কিছু হামলার ঘটনার সুযোগ নিয়ে বিজেপি রাজনৈতিকভাবে এই ইস্যু কাজে লাগাচ্ছে। হিমন্ত শর্মা প্রায়ই সীমান্তে অনুপ্রবেশ বন্ধের প্রচেষ্টা ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেন।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ