গাজা ইস্যুতে ফ্রান্সের পর এবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাজ্যও। দেশটির মন্ত্রিসভায় এক ঘোষণায় বলা হয়, ইসরায়েল যদি গাজায় দুর্ভিক্ষ দূর করতে পদক্ষেপ না নেয় ও অন্তত দুই বছরের যুদ্ধবিরতি না দেয়, তাহলে তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের জন্য দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করে অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ডসহ ১৫টি দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফ্রান্সের নেতৃত্বে দেশগুলো একটি যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে।
ফ্রান্সের নেতৃত্বে ১৫টি দেশ একটি যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে। এতে গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, হামাসের কাছে থাকা সব বন্দির মুক্তি এবং ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতের দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের জন্য নতুন করে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে– আন্দোরা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, মালটা, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, সান মারিনো, স্লোভেনিয়া এবং স্পেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সমালোচনার মুখে আন্তর্জাতিকভাবে আরও চাপে পড়েছে ইসরায়েল। ফ্রান্স গত সপ্তাহে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণার বিষয়টি ইসরায়েলি সরকারকে ক্ষুব্ধ করে। এই অবস্থায় কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এক এক্স পোস্টে নেতানিয়াহু বলেন, ‘স্টারমারের সিদ্ধান্ত হামাসের ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দেবে। আজ ইসরায়েলের সীমান্তে একটি জিহাদি রাষ্ট্র হলে আগামীকাল তারা ব্রিটেনকেও হুমকি দিতে পারে।’
যুক্তরাজ্যের ঘোষণাটি এমন সময় এলো, যখন গাজায় দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার নিয়েছে। সর্বশেষ গতকালও ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৪ জনে, যাদের মধ্যে ৮৯ শিশু। এক ডজন ত্রাণপ্রত্যাশীসহ ৩১ জনকে গতকাল হত্যা করা হয়েছে। গত ২১ মাসে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৬০ হাজার ৩৪ জন নিহত ও ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৭০ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার স্কটল্যান্ডে স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়নি। পরে এয়ারফোর্স ওয়ানে ট্রাম্প বলেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়ে হামাসকে ‘পুরস্কৃত করা উচিত’– এটা তিনি মনে করেন না। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্টারমারের সিদ্ধান্তকে ‘সাহসী’ বলে বর্ণনা করেছেন।
মঙ্গলবার স্টারমার তাঁর মন্ত্রিসভায় বলেন, পশ্চিম তীরে কোনো সংযুক্তি হবে না এবং ইসরায়েল যদি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান প্রক্রিয়ায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হয়, তাহলে আগামী সেপ্টেম্বরে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য। তবে ইসরায়েলের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। এর আগে সোমবার জাতিসংঘের এক সম্মেলনে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ‘কার্যকর দ্বিরাষ্ট্র সমাধান’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন জনগণের সমর্থন নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। রিপাবলিকান পার্টির সদস্য হিসেবে চিহ্নিত উত্তরদাতাদের ৭১ শতাংশ ইসরায়েলের আচরণকে সমর্থন করেন। আর ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে এই সংখ্যা মাত্র ৮ শতাংশ। তবে সামগ্রিকভাবে ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপকে অস্বীকার করেন।
অনাহার-অপুষ্টির বিভীষিকা
গাজায় কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করায় আন্তর্জাতিক ক্ষোভ বাড়ছে। অবশেষে ইসরায়েল সপ্তাহান্তে ত্রাণের প্রবেশাধিকার সহজ করার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, বাসিন্দাদের কাছে ত্রাণ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। ব্যাপক ক্ষুধা, অপুষ্টি এবং নানা রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। শীর্ণকায় ফিলিস্তিনি শিশুদের ছবি বিশ্বকে হতবাক করেছে। অনেক মানুষ অনাহারে রয়েছে– এটা ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন। গবেষণা সংস্থা গ্যালাপের একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩২ শতাংশ মার্কিনি গাজায় ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপকে সমর্থন করেন।
এনএইচ/