ভারতের মুসলিম-অধ্যুষিত মালেগাঁও শহরের একটি মসজিদের কাছে ২০০৮ সালে সংঘটিত ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্ত উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সাতজন সদস্যকে—যার মধ্যে ছিলেন বিজেপি-ঘনিষ্ঠ সংসদ সদস্য সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুর—দীর্ঘ ১৭ বছর পর বেকসুর খালাস দিয়েছে দেশটির একটি আদালত।
২০০৮ সালের ওই বিস্ফোরণে ছয়জন নিরীহ মুসলিম নিহত হন এবং আহত হন শতাধিক মানুষ। বিস্ফোরণটি সংঘটিত হয় জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের বেরিয়ে যাওয়ার সময়, যা স্পষ্টতই একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে পরিকল্পিত হামলার ইঙ্গিত দেয়।
সেই ঘটনায় সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলেও, বৃহস্পতিবার বিচারক এ কে লাহোটি রায় দেন যে, প্রসিকিউশন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রসিকিউশন দাবি করেছিল, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ছিল সাধ্বী ঠাকুরের মালিকানাধীন এবং তিনি হামলার পরিকল্পনা সভায় উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আদালত সেই প্রমাণকে অপর্যাপ্ত বলেই বাতিল করে দেন।
এ রায়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) দলের সংসদ সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্টে লিখেছেন, “নিহতদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণেই তারা টার্গেট হয়েছিল। এই রায় ন্যায়বিচারের জন্য এক দুঃখজনক অধ্যায়।” তিনি আরও বলেন, তদন্ত ও প্রসিকিউশন ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বলভাবে পরিচালিত হয়েছে, যাতে অপরাধীরা ছাড় পায়।
ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) আদালতে বলেছিল, মালেগাঁও বিস্ফোরণের উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করা। কিন্তু এই বক্তব্য মামলার শেষ পর্যন্ত দৃঢ়ভাবে উপস্থাপিত হয়নি।
সাধ্বী প্রজ্ঞা ২০১৭ সালে জামিনে মুক্তি পান এবং পরে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে ভোপাল আসনে নির্বাচনে জিতে সংসদে প্রবেশ করেন। রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিচারকাজ যে কতটা প্রভাবিত হতে পারে, এটি সেই বাস্তবতারই প্রতিফলন—এমনটাই মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
প্রজ্ঞা ঠাকুর অতীতেও একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন। তিনি গরুর প্রস্রাব পান করে ক্যান্সার নিরাময়ের দাবি করেছিলেন এবং মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে ‘দেশপ্রেমিক’ বলেছিলেন, যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেছিলেন।
এই রায় শুধু মালেগাঁও বিস্ফোরণের বিচারপ্রার্থী পরিবারগুলোর জন্য নয়, গোটা ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এক গভীর আঘাত। বিচার না পাওয়ার এই ধারাবাহিকতা ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়িয়ে তুলবে—মনে করছেন মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
বিশ্লেষকদের মতে, ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক অপরাধে অভিযুক্তদের ছাড় দেওয়া এবং রাজনৈতিকভাবে পুরস্কৃত করা ভারতের বিচার ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের জন্য একটি অশনি সংকেত।
এসএকে/