শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫ ।। ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ২১ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ভোলা কওমী ছাত্র ঐক্য পরিষদের নতুন কমিটি ঘোষণা ‘জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দিলে কোনো নির্বাচন হবে না’ ‘ইসলামপন্থীরা জুলাই অভ্যুত্থানে শুধু অংশ নেননি, তারা এর চিন্তাও নির্মাণ করেছেন’ ‘কওমি তরুণরা নানা অহেতুক কাজে জীবন খোয়াচ্ছেন’ ঘোষিত সময়েই নির্বাচন হতে হবে: দুদু দুদক সংস্কারে আইন প্রণয়ন ১-২ মাসের মধ্যে: আসিফ নজরুল দেশের ১১ অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস খিদমাহ ব্লাড ব্যাংকের এক দশক উদযাপন কাল, প্রধান অতিথি ধর্ম উপদেষ্টা ভাঙ্গা পৌর শাখায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নতুন কমিটি গঠন সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আইনি ভিত্তি দিয়ে জুলাই সনদ প্রণয়ন করতে হবে: খেলাফত মজলিস

রাজনীতি ও নেতৃত্বে আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী রহ .

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

শাব্বির আহমাদ খান

চলে গেলেন দেশের অন্যতম শীর্ষ ইসলামি রাজনীতিবিদ ও বর্ষীয়ান আলেম হজরতুল আল্লাম আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী রহ.। তিনি ছিলেন এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী। দেশের সর্বজন স্বীকৃত বুজুর্গ হজরত মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর ছোট সাহেবজাদা ছিলেন তিনি। বাবার কাছ থেকে রাজনীতির যে দীক্ষা লাভ করেছিলেন আমৃত্যু সেই আদর্শের ওপর অবিচল ছিলেন। দেশের রাজনীতি ও নেতৃত্বে সম্মানজনক আসন তিনি অলঙ্কৃত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। 
আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর জন্ম ১৯৪৮ সালের ১০ জানুয়ারি। জন্মস্থান লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানাধীন লুধুয়া গ্রামে। বাল্যকালেই তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্থ করেন এবং কওমি মাদরাসার শিক্ষা ধারায় লালবাগ জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া, গহরডাঙ্গা মাদরাসা, করাচি দারুল উলুম মাদরাসা ও পাকিস্তানের নিউটন মাদরাসায় অধ্যয়ন করে দাওরায় হাদিস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। ছোটবেলা থেকেই ধর্মচর্চা ও সমাজ ভাবনায় তাঁর আগ্রহ ছিল। হাদিসের আলো আর রাজনীতির বাস্তবতা—এই দুইয়ের মধ্যেই ছিল তাঁর চিন্তার জগৎ।
রাজনীতিতে তাঁর পথচলা শুরু হয় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মাধ্যমে। দলীয় পর্যায়ে কাজ করতে করতে তিনি হয়ে ওঠেন একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। একসময় তিনি ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন তিনি মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন।
২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রতিনিধি সম্মেলনে তাঁকে দলের আমির মনোনীত করা হয়। পরের বছর ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট তিনি জামিয়া নূরিয়া কামরাঙ্গীচরের মুহতামিম নিযুক্ত হন। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি পুনরায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির নির্বাচিত হন।
রাজপথের আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সক্রিয় ও স্পষ্টভাষী। ১৯৯২ সালে ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে তিনি নেতৃত্ব দেন। ১৯৯৪ সালে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের শাস্তির দাবিতে যে আন্দোলন হয়, সেখানেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। ২০০১ সালের ফতোয়াবিরোধী আন্দোলনেও তিনি সরাসরি নেতৃত্ব দেন।
২০০৭ সালে দৈনিক প্রথম আলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ব্যঙ্গ করে কার্টুন ছাপে। এই ঘৃণ্য ঘটনার প্রতিবাদে তিনি ছিলেন প্রথমসারির প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। আতাউল্লাহ হাফেজ্জী ও তাঁর বড় ভাই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে প্রথম বিক্ষোভ সমাবেশের নেতৃত্ব দেন। পরে সেই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। একই বছর, ২০০৭ সালে, সরকার ঘোষিত নারী নীতিমালা বাতিলের দাবিতেও তিনি রাজপথে সক্রিয় ছিলেন।
২০১৩ সালে তিনি খেলাফত আন্দোলনের ব্যানারে প্রথমবারের মতো নাস্তিক-মুরতাদ-ব্লগারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেন। এই আন্দোলন পরবর্তী সময়ে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। হেফাজতের ব্যানারে হওয়া সেই আন্দোলনের প্রথমসারির নেতাদের একজন ছিলেন আতাউল্লাহ হাফেজ্জী।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই রাজনীতিবিদ ও শীর্ষ আলেম ৪ এপ্রিল ২০২৫ শুক্রবার দুনিয়ার সফর সমাপ্ত করে পরকালের পথে যাত্রা করেন। তাঁর নামাজে জানাজায় হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে। পরে তাকে কামরাঙ্গীচরের নূরিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে বাবা হজরতুল আল্লাম মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ