সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য-সমঝোতা কতদূর? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী উত্তর-এর সমাবেশ  আদর্শিক বিরোধে গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত নয় : মাহফুজ আলম ইসলামি চার রাজনৈতিক দলের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক বন্দোবস্তের স্থায়ী বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার

বিশ্বজুড়ে ঈদুল আযহা: ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মিলনমেলা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ঈদ উল আযহা মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগ ও আনুগত্যের স্মৃতিকে কেন্দ্র করে এই দিনটি উদযাপিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদ-উল-আযহার উদযাপনে রয়েছে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও স্থানীয় রীতিনীতির প্রভাব। পশু কোরবানির ধরন, পরিবেশ সচেতনতা, ও দরিদ্রদের মাঝে গোশত বিতরণের রীতিতেও দেখা যায় নানা ভিন্নতা। চলুন কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশের ঈদুল আযহা উদযাপন দেখি:

সৌদি আরবে ঈদুল আযহা 
 
সৌদি আরবজুড়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয় মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘ঈদুল আজহা’। এই দিনটি মুসলিম বিশ্বে কুরবানি ঈদ নামেও পরিচিত, যা হজের শেষ দিনে ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগের স্মরণে উদযাপিত হয়। একদিকে পবিত্র হজ এবং অন্যদিকে কোরবানি মিলে সৌদিতে ঈদুল আজহার উৎসব অনন্য রূপ লাভ করে। 

আরাফাতের ময়দানে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পরদিন সকালে সৌদি আরবে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। মক্কা, মদিনা, রিয়াদ, জেদ্দা ও অন্যান্য শহরের প্রধান ঈদগাহ ময়দান এবং মসজিদগুলোতে লাখো মুসল্লি ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করেন।

সৌদি আরবে ঈদ উপলক্ষে ঘরে ঘরে তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী আরবি খাবার যেমন কাবসা, ম্যান্ডি, সাম্বুসা এবং বিভিন্ন প্রকার খেজুর ও মিষ্টান্ন। পরিবারের সবাই একত্রে খাওয়া-দাওয়া করেন এবং আত্মীয়স্বজনদের ঘরে ঘরে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।


তুরস্কে ঈদুল আযহা

মুসলিমবিশ্বের সংস্কৃতি লালন করা দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের নামটাও শুরুতেই আসে। মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা দেশটিতে পালিত হয় এক অনন্য উৎসবমুখর পরিবেশে। আনাতোলিয়ার তুর্কি বেলিক ও পরবর্তীদের অটোমান সাম্রাজ্যের উত্থান দেশটিতে ঈদুল আযহাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তুর্কি ভাষায় এ ঈদকে বলা হয় ‘কোরবান বায়রামি’।

ঈদের দিন ফজরের নামাজ থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় তুরস্কে। নতুন জামা পরে সুগন্ধি দিয়ে বাবা-ছেলে, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই ছুটে যায় ঈদগাহের দিকে। নামাজ শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলি করে একে অপরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান, তুর্কিতে যাকে বলা হয় ‘বায়রামিন কুতলু ওলসুন’ অর্থাৎ ‘ঈদ মোবারক’।

নামাজের পর শুরু হয় ঈদুল আজহার মূল পর্ব—পশু কোরবানি। তুরস্কে সাধারণত ভেড়া, ছাগল, গরু বা উট কুরবানি দেওয়া হয়। দেশটিতে সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করা বাধ্যতামূলক। সম্প্রতি অনেকে অনলাইন প্ল্যাটফরম ও স্থানীয় দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে কোরবানির ব্যবস্থা করেন, যা ক্রমেই দেশটিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে।

ঈদের খাবারেও তুর্কি স্বাদের ঐতিহ্য ফুটে ওঠে। কোরবানির গোশত দিয়ে তৈরি হয় নানা পদ যেমন ‘কাভুরমা’ (ভাজা মাংস), ‘পিলাভ’ (চাল ও মাংসের মিশ্রণ), এবং মিষ্টান্ন হিসেবে থাকে বাকলাভা, কুনাফা, লোকুমসহ ঐতিহ্যবাহী সব খাবার। শিশুদের মাঝে বিতরণ করা হয় চকলেট ও উপহার—যাকে স্থানীয়রা বলে ‘ঈদের মিষ্টি’।

ইরানে ঈদুল আজহা
 
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী মুসলিম দেশ ইরানে ঈদুল আজহা পালন করা হয় অত্যন্ত ভাবগম্ভীর ও ঐতিহ্যবাহী পরিবেশে। ধর্মীয় আবেগ, সামাজিক সংহতি ও পারিবারিক মিলনের এই উৎসবটি দেশটিতে পরিচিত ‘নোনতা ঈদ’ নামে। কারণ এ সময় গোশতনির্ভর নানা মুখরোচক খাবারের আয়োজন হয় প্রতিটি ঘরে।

ঈদের দিন খুব ভোরে ইরানের মানুষ নতুন পোশাক পরে প্রস্তুত হন ঈদের নামাজের জন্য। স্থানীয় মসজিদ, ঈদগাহ বা খোলা মাঠে জড়ো হয়ে আদায় করেন ঈদের নামাজ।

ইরানে গরু, ছাগল, ভেড়া, উট কোরবানি দেওয়া হয় বিভিন্ন অঞ্চলে। কোরবানির গোশত গরিব, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের হাদিয়া পাঠানো হয়।

খাবারের দিক থেকে ঈদুল আযহা ইরানে হয়ে ওঠে ভোজনরসিকদের জন্য এক উৎসব। ঈদের দিনে ঘরে ঘরে রান্না হয় কোরবানির গোশত দিয়ে নানা রকমের সুস্বাদু খাবার। বিশেষ করে বিখ্যাত ইরানি কাবাব—যেমন কুবিদে কাবাব, বার্ঘ কাবাব ও জুজে কাবাব। ঈদের বিশেষ খাবারের তালিকায় আরও রয়েছে ঐতিহ্যবাহী হালিম। পাশাপাশি ‘বাঘালি পোলাও’ এবং ‘খোরেশ’ জাতীয় নানা তরকারি দেখা যায় খাবারের টেবিলে।

ইন্দোনেশিয়ায় ঈদুল আযহা
 
বিশ্বে আয়তনে সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। সংখ্যার দিক থেকেও দেশটি মুসলিম দেশের শীর্ষে অবস্থান করছে। ঈদুল আযহার মূলে থাকা কোরবানি আদায়ের পদ্ধতিতেও এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দেশটি।

ইন্দোনেশিয়ায় কোরবানি শুধু একটি ধর্মীয় বিধান নয়, এটি একটি সামাজিক উদ্যোগেও রূপ নিয়েছে। ঈদুল আযহার সময় সামর্থ্যবান মুসলিমরা হাট থেকে কোরবানির পশু কিনে তা মসজিদে দিয়ে আসেন। অনেক মসজিদে ৮-১০টি পর্যন্ত কোরবানির পশু আসে। এরপর শুরু হয় সুশৃঙ্খল কোরবানির প্রক্রিয়া।

প্রতিটি মসজিদ এলাকায় কতগুলো পরিবার রয়েছে—তার পূর্ণ হিসাব থাকে স্থানীয় ইমামের কাছে। সেই হিসাব অনুযায়ী কোরবানির মাংস ভাগ করা হয়। পশু জবাই শেষে স্বেচ্ছাসেবকরা দলবদ্ধভাবে গোশত কেটে ছোট ছোট প্যাকেটে ভাগ করেন এবং সেগুলো পৌঁছে দেন প্রতিটি পরিবারে।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ