সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য-সমঝোতা কতদূর? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী উত্তর-এর সমাবেশ  আদর্শিক বিরোধে গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত নয় : মাহফুজ আলম ইসলামি চার রাজনৈতিক দলের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক বন্দোবস্তের স্থায়ী বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার

ফিরে দেখা ১৫ জুলাই: ‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলনে ছাত্রলীগের আক্রমন


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের ১৫ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক বর্বর ও স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ হামলার দিন হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা চালিয়ে পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে পরিণত করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

সেদিন ঢাবি ক্যাম্পাসে আহত হন অন্তত ২৯৭ জন শিক্ষার্থী। ঢামেক সূত্র জানায়, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েও ছাত্রলীগের হাতে ফের নিগৃহীত হন অনেকেই। মোট আহতের সংখ্যা চার শতাধিক ছাড়িয়ে যায়, যার মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকও রয়েছেন।

এর আগের দিন, ১৪ জুলাই, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে কটূক্তি করেন। তার এ বক্তব্যেই পরদিন রাজপথ উত্তাল হয়ে ওঠে।
১৫ জুলাই সকাল থেকেই টিএসসি, রাজু ভাস্কর্যসহ ঢাবির বিভিন্ন প্রান্তে জমায়েত হন শিক্ষার্থীরা। বিকেলে আন্দোলনকারীদের মিছিল হল এলাকায় পৌঁছালে বিজয় একাত্তর হলের সামনে শুরু হয় সংঘর্ষ।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রড, হকিস্টিক, রামদা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মিছিলকারীদের ওপর চড়াও হয়। হামলা চলে হল, ক্যান্টিন, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ও ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালেও। তল্লাশি চলে ছাত্রদের মোবাইল ফোনে। আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেলেই বেধড়ক পেটানো হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আহতদের চিকিৎসায় নিয়েও হামলা হয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে মেডিকেল এলাকায়। পুলিশ কোনো সহযোগিতা করেনি। এটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা।”

এছাড়া উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল এক জরুরি সভায় হল প্রাধ্যক্ষদের রাতভর অবস্থানের নির্দেশ দিলেও এতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। রাত ১০টার পর ছাত্রলীগ নেতারা হলগুলোতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর তল্লাশি ও মারধর করে।

ছাত্রলীগের হামলা শুধু ঢাবিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, এম এম কলেজ যশোর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েট, এমনকি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হয়।

জাবিতে ১৪ জুলাই রাতেই অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ কর্মীরা হলে ঢুকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে মারধর করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়।

ইডেন কলেজে গেট তালাবদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা দেওয়া হয়।

আন্দোলনের দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “তারাই আত্মস্বীকৃত রাজাকার। ছাত্রলীগ জবাব দেবে।”

ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন হুমকি দেন, আন্দোলনকারীদের শেষ দেখে ছাড়বেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “এটি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান।”

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মন্তব্য করেন, “তারা এ যুগের রাজাকার। তাদের পরিণতি হবে পূর্বসূরিদের মতো।”

এ ধরনের বক্তব্য শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরও উসকে দেয়। সেইসাথে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের সহিংসতার অভিযোগ গণমানুষের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ
১৫ জুলাই রাতে নাহিদ ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক ঘোষণা দেন,

“১৬ জুলাই বিকেল ৩টায় দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর কটূক্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ