সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য-সমঝোতা কতদূর? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী উত্তর-এর সমাবেশ  আদর্শিক বিরোধে গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত নয় : মাহফুজ আলম ইসলামি চার রাজনৈতিক দলের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক বন্দোবস্তের স্থায়ী বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার

এনসিপিকে ৫টি পরামর্শ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহিব খান

১.

এনসিপি যদি নিখাঁদ দেশপ্রেম, নিবিড় ধর্মীয় অনুভূতি, সামাজিক মূল্যবোধ, সততা-স্বচ্ছতা ও নীতি-নৈতিকতার প্রতি বিশ্বাসী, শ্রদ্ধাশীল ও চর্চাশীল থেকে নিজেদের রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে যায়, তাহলে এদেশের দেশপ্রেমিক ধর্মপ্রাণ নীতিবান সৎ সভ্য নাগরিকদের আন্তরিক সমর্থন ও সার্বিক সহযোগিতা জ্যামিতিক হারে অর্জন করার অপার সম্ভাবনা তাদের রয়েছে।

এদেশের একটি বৃহৎসংখ্যক নাগরিক প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তীব্র অসন্তোষ ও অনাস্থাভাজন হয়ে আছেন, কিন্তু বিশ্বাস ভালোবাসা এবং আস্থা রাখার মতো কোনো উপযুক্ত রাজনৈতিক দলের খোঁজ তারা পাচ্ছেন না, সেই জায়গাটি পূরণ করার সুযোগ এবং সম্ভাবনা এনসিপির রয়েছে, যদি তারা তাদের সঠিক করণীয় অনুধাবন ও নির্ণয় করতে পারেন।

২.

এদেশের মানুষ জাতীয় চরিত্র ও ঐতিহ্যগতভাবেই সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী, কেবল ভারতবিরোধীই নয়। ভারতীয় আধিপত্যবাদের শৃঙ্খল ভেঙে জাতিকে মুক্ত করার সুদীর্ঘ সংগ্রামের একেবারে চূড়ান্ত ধাপের অগ্রভাগে অবস্থান ও অবদান ছিল বলেই এনসিপির তারুণ্যদীপ্ত নেতৃবৃন্দ গণমানুষের ব্যাপক ভালোবাসা অর্জন করতে পেরেছিলেন। কিন্তু সেটা ছিল ঝড়-ঝঞ্ঝার মতো আন্দোলন ও অভ্যুত্থান, আর এখন তাদের দক্ষতা ও নৈপুণ্য প্রমাণ করতে হবে বয়ে চলা স্রোতের মত রাজনীতিতে। এক্ষেত্রে গণমানুষের ভালবাসার সঙ্গে গণমানুষের অবিচল আস্থা অর্জন করাও পূর্ব শর্ত।

অতএব ভারতের মতোই যদি তারা আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, মায়ানমারসহ বিশ্বের অন্যান্য পরাশক্তির অন্যায় আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী অভিলাষ থেকেও দেশ ও জাতিকে মুক্ত রাখার  নিরাপদ ও সুকৌশলী চিন্তা বক্তব্য ও কর্মসূচি প্রমাণ করতে পারেন, তাহলেই তারা জনগণের সেই আস্থাও অর্জন করতে পারবেন এবং তাদের রাজনীতির রূপরেখা এরকমটাই হওয়া উচিত।

৩.

দুর্নীতি মৌলিকভাবে দুই প্রকার : আর্থিক দুর্নীতি এবং নীতিগত দুর্নীতি। এনসিপিকে হতে হবে প্রায় শতভাগ দুর্নীতি মুক্ত। অহংকার অত্যাচার দাপট চাঁদাবাজি দখলদারি আঁতাত ও কূটকৌশলের মতো দোষ ও বদনাম থেকে মুক্ত। দলটিকে হতে হবে (বর্তমানে নিষিদ্ধ) আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি'র মতোই ব্যাপক গণ-ভিত্তিক ও বিস্তৃত পরিসরের দল, কিন্তু আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যে আদর্শ ও চরিত্রগত দিক থেকে জনগণের চোখে যত দোষ ও অনাস্থার জায়গা আছে; সেগুলো থেকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মুক্ত দল। তবেই দলটি গণমানুষের কাঙ্খিত প্রিয় দল হয়ে উঠতে পারবে।

৪.

এনসিপির উচিত হবে- আত্মপ্রকাশের দিন থেকে গত তিন মাসে যেসব বিতর্কে মুখোমুখি তারা হয়েছেন, সেই সব বিষয়কে গুরুত্বসহ আমলে নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ করে সমাধান করা এবং এখনই শুধরে নেওয়া। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ চিন্তা ও কর্মসূচিগুলো আরো অনেকগুছিয়ে ও ভেবে-চিন্তে গ্রহণ করা। প্রতিনিয়ত উদ্ভূত নানা ইস্যু ও পরিস্থিতিতে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মাথায় রেখে কথা বলা, কর্মসূচি গ্রহণ করা।

সর্বোপরি চলমান পরিস্থিতির বাইরেও দেশ ও মানুষের সেবা কল্যাণ নিরাপত্তার স্বার্থে এমন কিছু সাংগঠনিক ধারাবাহিক সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ করা- যার দ্বারা তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের গণসংযোগ ও রাজনৈতিক জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি জনগণ তাদের পাশে থাকা বন্ধু এবং আশ্রয় হিসেবে এই দলটিকেই মন থেকে গ্রহণ করতে শুরু করবে।

৫.

এনসিপির অধিকাংশ নেতা কর্মী সমর্থকদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ এর নিচে। তারুণ্যের আবেগ ও উচ্ছাসসুলভ কিছু ছেলেমানুষী, কিছু ভুল ত্রুটি, কিছু অপরিপক্ক কথা কাজ আচরণ তাদের থেকে প্রকাশ পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। সবার মনে রাখা উচিত যে, এদের এই অদম্য সাহস এবং অবাধ্য আবেগ উচ্ছ্বাসটাই ২৪ এর সাফল্যের মূলমন্ত্র এবং চাবিকাঠি ছিল। তাদের এই আবেগ উচ্ছ্বাসটুকুও জাতির অমূল্য শক্তি ও সম্পদ।

এই শক্তি ও সম্পদকে সঠিক চিন্তা ও পথে কাজে লাগানোর জন্য তাদের কিছুসংখ্যক চিন্তক দূরদর্শী নীতিবান এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান অভিভাবক প্রয়োজন। যারা এই দামাল ও উত্তাল তারুণ্যকে নীতি নৈতিকতা, দেশপ্রেম, ধর্মানুরাগ, সামাজিক মূল্যবোধ এবং সঠিক রাজনৈতিক তত্ত্ব ও জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবেন এবং এই অভূতপূর্ব তারুণ্যের শক্তি দিয়েই দেশ জাতি ধর্ম সত্য এবং মানবতার ব্যাপক কল্যাণ সাধন করিয়ে নিতে পারবেন।

শেষ কথা

২০২৪ এর রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি সুনির্দিষ্ট সরকারের পতন বা সুনির্দিষ্ট দলকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না বরং বিদেশি আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের কবল থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করার বৃহৎ লক্ষ ও অদম্য চেতনাতেই সংঘটিত হয়েছিল এবং এটি ছিল একটি জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মতোই ঐতিহাসিক উপাখ্যান।

জাতির এক ঐতিহাসিক ক্রান্তিলগ্নে সংঘটিত সেই মুক্তিযুদ্ধের স্ফুলিঙ্গ থেকে উঠে আসা তারুণ্যের নেতৃত্বে 'জাতীয় নাগরিক পার্টি' নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, যার চিন্তা চেতনা, নীতি আদর্শ, রাজনৈতিক ইশতেহার ও কর্মকৌশল ২৪ পূর্ববর্তী বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চাইতে যথেষ্ট আধুনিক, নির্দোষ ও দূরদর্শী হওয়া উচিত।

নতুন বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি 'এনসিপি'র প্রতি আমি কেবল মৌলিক দৃষ্টিকোণ থেকে কয়েকটি পরামর্শের নমুনা উত্থাপন করেছি, এর প্রতিটি বাক্য ও বক্তব্যের ব্যাখ্যা এবং গাইডলাইনও রয়েছে, যা প্রয়োজনে কোন নিবিড় পরিসরে সবিস্তারে বিশ্লেষণ করবো। কোন দল বা সংগঠনের রাজনৈতিক কর্ম-কৌশল বিষয়ক পরামর্শ গণমাধ্যমে সবিস্তারে প্রকাশ করা উচিত নয় বলেই আমি তা করিনি। আমি এনসিপির তারুণ্যের সঠিক রাজনীতি ও সার্বিক সমৃদ্ধি কামনা করছি।

২০ মে ২০২৫, মঙ্গলবার।

লেখক: বিশিষ্ট কবি, গীতিকার, লেখক, রাষ্ট্রচিন্তক

আরএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ