সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য-সমঝোতা কতদূর? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী উত্তর-এর সমাবেশ  আদর্শিক বিরোধে গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত নয় : মাহফুজ আলম ইসলামি চার রাজনৈতিক দলের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক বন্দোবস্তের স্থায়ী বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার

আপনাদের গা জ্বলাজ্বলিতে কওমিওয়ালাদের কিছু যাবে আসবে না

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর || 

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গত ২৫ মে ২০২৫ তারিখে বৈঠক করেছেন সমমনা ইসলামি দলগুলোর প্রধান নেতৃবৃন্দ। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নেতৃবৃন্দের ছবি মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার পর গা-জ্বালা শুরু হয়েছে একশ্রেণির লোকের। নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক সমকামী তাসনিম খলিল প্রধান উপদেষ্টার ছবি ব্যাঙ্গ করে তাকে ‘কওমি-বাপ’ বলে উপহাস করেছেন। 

আলেম-উলামাদেরকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করতে দেখলে যাদের এই ধরনের গা-জ্বালা স্বভাব, আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, রক্ত-উত্তাল ৫ আগস্টের আগে যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, উত্তরায় নিশ্ছিদ্র ব্যারিকেড তৈরি করে ঢাকাকে অচল করে দিয়েছিল যারা, তাদের বৃহৎ অংশ ছিল এই কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, সাধারণ আলেম সমাজ।

জুলাই বিপ্লবে শুধুমাত্র কওমি মাদরাসার শহীদ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০-এর অধিক। আহত হয়েছেন আরও আরও কয়েক শতাধিক। এই পরিসংখ্যানটা মগজে গেঁথে রাখেন। 

ড. ইউনূসের সংস্কার প্রস্তাবে সর্বোতভাবে সমর্থন দিয়েছেন যারা, তারা এই আলেম-উলামাদের দল এবং কওমি মাদরাসাকেন্দ্রিক সংগঠন ও ব্যক্তিরা। 

হাসনাত আবদুল্লাহ যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ডাক দিয়ে যমুনার সামনে ও শাহবাগে অবস্থান নিল, তখন সেই গণজোয়ারের সিংহভাগ ছিল কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে নাই। 

প্রশাসনের নানা কন্সপিরেসি আর ষড়যন্ত্রে যখন অন্তর্বর্তী সরকার টালমাটাল, ড. ইউনূসও পদত্যাগ করতে বদ্ধপরিকর, তখন তার পেছনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সবগুলো ইসলামি দল। এবং তারা আশ্বাস দিয়েছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ে সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত ইউনূস সরকারের প্রতি তাদের পূর্ণ আস্থা অবিচল থাকবে। 

আপনারা বাম-রাম বাবু যারা সামান্য স্বার্থে আঘাত লাগলেই মা-বইন এক করে ফেলেন, কওমি মাদরাসার ইতিহাস ও চরিত্র সম্পর্কে আপনারা কিছুই জানেন না। তাদের মেন্টালিটি সম্পর্কে আপনাদের সামান্যতম ধারণা নেই। এই দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সবচে বড় স্টেকহোল্ডার এই কওমিওয়ালারা। যে কোনো অন্যায় প্রতিরোধ করতে জীবন বিলিয়ে দিতে তারা সামান্য কুণ্ঠাবোধ করেন না।
 
এতদিন নানাভাবে তাদের সেই অবদান ও চরিত্রকে দাবিয়ে রাখা হয়েছিল। কখনো রাজাকার, কখনো হেফাজতি, কখনো পাকিস্তানপন্থী আখ্যায়িত করে তাদেরকে মাদরাসার চৌহদ্দিতে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। 

মসজিদ আর মাদরাসার বাইরেও যে সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে তাদের অংশগ্রহণ জরুরি এবং এটা তাদের নাগরিক অধিকার, এই অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। আপনাদের মতো একদল এজেন্সি ও এনজিও’র খুদ-কুড়া খাওয়া লোকের অপপ্রচারে তাদের কখনো রাষ্ট্র নির্মাণে অংশ নিতে দেওয়া হয় নাই।
 
কিন্তু এখন সময় এসেছে। জুলাই বিপ্লব তাদেরকে তাদের অধিকার বিষয়ে সচেতন করেছে। জুলাই তাদেরকে রাষ্ট্র বিনির্মাণের কাতারে নিয়ে এসেছে। রাজনৈতিকভাবে তাদের ইমপর্ট্যান্স তারা অনুধাবন করতে পেরেছে। 

সুতরাং, কওমিওয়ালারা এই বাংলাদেশে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিপ্লবে সামান্যতম পিছু হটবে না। এতে আপনাদের গা জ্বলাজ্বলিতে তাদের কিছু যাবে আসবে না। 

কবি নজরুল তাদের হয়েই বলে গেছেন-

তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান!
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে, নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার!
দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুঁশিয়ার!
ইনকিলাব জিন্দাবাদ!

লেখক: কথাসাহিত্যিক, বহু গ্রন্থ প্রণেতা

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ