সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য-সমঝোতা কতদূর? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী উত্তর-এর সমাবেশ  আদর্শিক বিরোধে গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত নয় : মাহফুজ আলম ইসলামি চার রাজনৈতিক দলের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক বন্দোবস্তের স্থায়ী বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার

প্রযুক্তি, মিডিয়া ও ইসলাম: নৈতিক পথের সন্ধানে


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

|| আ.স.ম আল আমিন ||

প্রযুক্তির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে মূল্যবোধ। আমাদের চারপাশ এখন প্রযুক্তির আলোকচ্ছটায় দীপ্ত। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, সামাজিক মাধ্যম—সবই হাতের নাগালে। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে ঠিকই, কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই সহজতা আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রযুক্তি হারাম নয়, বরং এটি একটি নিয়ন্ত্রিত নেয়ামত। এর সঠিক ব্যবহার করলে তা হবে রহমত, আর অপব্যবহার করলে তৈরি করবে অপসংস্কৃতি ও আত্মিক দূরত্ব।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘তোমরা যা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা ভালোভাবে জানেন।’ (সুরা হুজরাত: ১৮)

সোশ্যাল মিডিয়ায় নৈতিকতার সংকট
ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম—এই প্ল্যাটফর্মগুলো এখন আর কেবল বিনোদনের জন্য নয়, বরং মানুষের চিন্তা-ভাবনা গঠনেরও হাতিয়ার। কিন্তু খুব কম মানুষই ভাবেন—আমি যা পোস্ট করছি, তা কি সত্য? আমি যা দেখছি, তা কি আমার চরিত্রকে ধ্বংস করছে না?
আল্লাহ তায়ালা বলেন:  ‘যার বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৩৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন— ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা নীরব থাকে।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

সোশ্যাল মিডিয়ায় দায়িত্ববোধহীন একটি স্ট্যাটাস, একটি ভিডিও কিংবা একটি গুজব—পুরো সমাজে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিতে পারে।

বিনোদন: সীমা পেরুলে অবক্ষয়
ইসলাম জীবনের প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে। তাই শরীর ও মনের ক্লান্তি দূর করতে বিনোদন বৈধ, কিন্তু তা যদি চলে যায় অশ্লীলতা, মিথ্যা ও বেহায়াপনার পথে—তবে তা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘আর তারা (মুমিনেরা) নিরর্থক কথাবার্তা ও কাজে লিপ্ত হয় না।’ (সুরা মুমিনুন: ৩)

টিকটক, রিলস, নাটক ও গান—যখন সময় খেয়ে নেয়, চরিত্রকে মলিন করে, তখন বিনোদন আর নিরীহ থাকে না, হয়ে যায় ধ্বংসের হাতিয়ার।

সময়ের অপচয়: আত্মার প্রশান্তি হরণকারী
প্রযুক্তির নেশায় আজ আমরা হারিয়ে ফেলেছি সময়ের মূল্য। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনে ডুবে থাকার পরও হৃদয় থাকে শূন্য, মন হয় অবসন্ন। অথচ, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘দুটি নেয়ামতের মূল্য মানুষ বুঝতে পারে না—স্বাস্থ্য ও ফাঁকা সময়।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪১২)
একজন মুসলমানের উচিত—প্রতিদিন কত সময় সে প্রযুক্তিতে দিচ্ছে, কতটা উপকার পাচ্ছে, আর কতটা সময় অপচয় করছে—সেদিকে গভীরভাবে নজর রাখা।

একজন মুসলমান কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করবে?
১. প্রযুক্তি যেন হয় উপকারে ও নিয়ন্ত্রণে
২. সত্য যাচাই ছাড়া কিছুই শেয়ার না করা
৩. অশ্লীল ও গিবতপূর্ণ কনটেন্ট এড়িয়ে চলা
৪. দৈনিক নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে মিডিয়া ব্যবহার
৫. প্রযুক্তিকে বানাতে হবে ইসলামি দাওয়াহ, জ্ঞান ও কল্যাণের বাহন
প্রযুক্তি আমাদের হাতে আল্লাহর এক পরীক্ষাও বটে। এর ব্যবহারে আমরা পেতে পারি সওয়াব, আবার হারাতে পারি ঈমান।

আজ প্রয়োজন সচেতন মুসলমানের মতো চিন্তা, যেখানে আধুনিক যন্ত্র থাকবে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ থাকবে দীন ও বিবেকের হাতে। আমরা যদি প্রযুক্তিকে ইসলামের আলোতে পরিচালিত করি, তবে এই যুগের ভেতরেও গড়ে তুলতে পারি এক আলোকিত, ভারসাম্যপূর্ণ ও নৈতিক সমাজ।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক,  মাদরাসাতুন নূর আল আরাবিয়া বাংলাদেশ, আফতাবনগর, ঢাকা

এমএম/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ