সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য-সমঝোতা কতদূর? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী উত্তর-এর সমাবেশ  আদর্শিক বিরোধে গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত নয় : মাহফুজ আলম ইসলামি চার রাজনৈতিক দলের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক বন্দোবস্তের স্থায়ী বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার

কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে দেশ সচেতন  নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে প্রকৃত দেশ সচেতন  নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এটি এখন খুবই জরুরী বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।  জন্মসূত্রে এদেশ তাঁদের,  তাঁরা কারো ‘দাস’ কিংবা মজদুর নন, এ ধরনের মনোভাব তাঁদের মধ্যে তৈরী করা খুব দরকার।

সাধারণত মাদরাসা সমূহে নিঃশর্ত আনুগত্যের প্রাকটিস চলে।  এ ধরনের মানসিকতা অনেক সময় শরীআতের গণ্ডি অতিক্রম করে যায়। আর এই অনুশীলনের প্রভাব পড়ে বাস্তব জীবনে। এজন্য শরীআত সম্মত, বাস্তবসম্মত ও ন্যায়সঙ্গত আনুগত্যের অনুশীলন তাঁদের মধ্যে যথাযথভাবে চালু করা দরকার। অবশ্য এ কথাও তাঁদেরকে শেখানো হয় যে,

لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق،

'কোনো সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না, স্রষ্টার নাফরমানী করে।'

বাস্তব ক্ষেত্রে সাধারণত উল্লিখিত উক্তির বাস্তবায়ন পাওয়া যায় শতকরা হারে অনেক কম। অতএব, একজন কওমী শিক্ষার্থীকে বুঝাতে হবে যে, ন্যায় কথা যথাযথ আদবের সাথে বলা তাঁর  অধিকার, প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করা  তাঁর অধিকার, দেশের সম্পদে  তাঁরও ভাগ আছে, দেশের সকল ব্যাপারে ভালো-মন্দ বলার অধিকার তাঁরও আছে। হ্যাঁ, এসব ভালোভাবেই তাঁকে  শিখাতে হবে।

জী হ্যাঁ, এসব প্রশ্ন করতে ও এসব শিখানো তাঁর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে জরুরী। অন্তত তাঁকে এটা বুঝানো যে, এই দেশে আপনারও কিছু বলার আছে, করার আছে অনেক কিছু।

বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি, বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক পলিসি, বাংলাদেশের ফরেন বাণিজ্যিক পলিসি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে জালালাইন, মিশকাত, দাওরা ও তাখাসসুস এর ক্লাসগুলোতে নির্ধারিত বিষয়ে তাঁদের ধারণা থাকা দরকার। এখন উল্লিখিত বিষয়সমূহের উপর নিয়মিত দরস এসব ক্লাসে অপরিহার্য করে দেওয়া দরকার।

বাংলাদেশে মোট মন্ত্রণালয় কয়টি, সে সম্পর্কে তাঁদের জানার হক আছে। অফিস আদালত সম্পর্কে জানা, কোন অফিসের কি কাজ, কোন ডিপার্টমেন্ট কি সেবা প্রদান করে, এসব তাঁদের জানা দরকার।

সরকারী অফিস সমূহের কর্মকর্তা ও কর্মচারী মানেই আমাদের শাসক, এই মনোভাব না জানা থেকেই তৈরী হয়ে আছে। নাগরিক অধিকারসমূহ তাঁদেরও জানা দরকার। নয়তো এতো হীনমন্যতা তৈরী হয় যে, ‘চৌকিদারকে’ স্যার বলবে, না  কি বলবে, তাতেও তাঁদের দ্বিধা হবে । এখন আমাদের মাদরাসার ছেলেদের কেউ কেউ পুলিশ কনস্টেবল দেখলেও কখনো হাক্কা বাক্কা খেয়ে যায়।

দয়া করে কিছু মনে করবেন না, আমাদের  পরিবার  বড়- অর্থাৎ, ভাই বোন অনেক। আমাদের ভাইদের মধ্যে অতিরিক্ত সচিবও আছেন। এজন্য আমি একজন অতিরিক্ত সচিবকে শ্রদ্ধার সাথে আমার বড়ভাই মনে করি। আমাদের পরিবারে কয়েকজন ডাক্তার আছেন।আমাদের এক ভাই একটি সরকারী মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল। এজন্য একজন চিকিৎসক মহোদয়কে আমি শ্রদ্ধার সাথে বড় ভাই কিংবা অত্যন্ত স্নেহের সাথে ছোট ভাই মনে করি। আমার এক ছোট ভাই অতিরিক্ত আইজিপি। এজন্য আমি এই পদের এবং এর নীচের পদের পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে অত্যন্ত স্নেহের সাথে ছোট ভাই মনে করি। সাথে সাথে তাঁদের অফিসিয়াল পদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাবোধ, ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁদের  প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন এর বিষয়টিও আমি একান্ত দায়বদ্ধতা থেকেই অনুধাবন করি।

কওমী শিক্ষার্থীদেরকে কমনসেন্স এর প্রাকটিস করানো দরকার। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রাকটিস না থাকলে ব্যক্তি, পরিবার ও সামগ্রিক জীবনে পিছনে থাকতে হয়।  আত্মমর্যাদা বোধ শিখানো না হলে নেতৃত্বের বিকাশ হওয়া তো দূরের কথা, নিজের মতামতও প্রকাশ করার সাহস থাকে না।

এই বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠান খেয়াল করলে এবং তাঁদের শিক্ষক মহোদয়গণকে প্রাকটিস করালে অনেকাংশে উপকার পাওয়া যাবে।

পাবলিক রিলেশন বা পি আর সম্পর্কে তাঁদেরকে ও আমাদের আসাতিযায়ে কেরামকে ন্যূনতম ধারণা প্রদান করা দরকার। পাবলিক রিলেশন বা পি আর কিন্তু  ইসলামের প্রাণ। একজন নবী বা নায়েবে নবীর অন্যতম প্রধান কাজ হলো, পাবলিক রিলেশন। পাবলিক রিলেশন না থাকলে একজন মানুষ অস্তিত্বহীনতার আশঙ্কায় পড়ে যায়।

আমাদের আকাবিরদের হাত উম্মতের প্রতিটি সদস্যের শিরার উপরে ছিলো। তাঁরা উম্মতের প্রতিটি সদস্যের পালস বুঝতে পারতেন। আর আজ আমাদের হাত উম্মতের শিরা থেকে এতো দূরে চলে গেছে যে, উন্মত আমাদেরকে 'অতিরিক্ত জনগণ' ভাবতে বসেছে।

জীবন জিন্দেগীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পাঠগৃহে না শিখালে তাঁরা কোথায়  শিখবেন? একটি প্রসিদ্ধ প্রবাদ আমরা সব সময় মনে রাখতে পারি। আর তা হলো, একজন শিক্ষার্থীর ভাগ্য পুনর্গঠিত হয় তাঁর পাঠগৃহে। অতএব, আমাদের এসব পবিত্র পাঠগৃহে দীন-দুনিয়া সমান্তরাল ভাবে উভয়টিই শেখাতে হবে, তাহলেই আসবে উভয় জগতে সফলতা।

-মুফতী মুঈনুল ইসলাম।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ