সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য-সমঝোতা কতদূর? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী উত্তর-এর সমাবেশ  আদর্শিক বিরোধে গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত নয় : মাহফুজ আলম ইসলামি চার রাজনৈতিক দলের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক বন্দোবস্তের স্থায়ী বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার

কারবালা: সাহসিকতার এক সমুজ্জ্বল অধ্যায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুল্লাহ আলমামুন আশরাফী 

কারবালার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মুসলিম  বিশ্বের খলিফা হযরত মুয়াবিয়া রা.২০ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা শেষে ৬০ হিজরিতে ইনতেকাল করেন। মৃত্যুর পূর্বে মজলিসে শুরা ও সামাজিক নেতাদের পরামর্শক্রমে তার পুত্র ইয়াযিদকে শাসক মনোনীত করেন। পিতার মৃত্যুর পর ইয়াযিদ খেলাফতের দাবি করলে মুসলিম বিশ্বের কিছু অঞ্চল তাকে খলিফা মেনে নিলেও মদীনা মুনাওয়ারা ও কুফার অধিকাংশ মানুষ তাকে মেনে নিতে অস্বীকার করেন। কুফার জনগণ নবি দৌহিত্র ইমাম হোসাইন রা. কে খলীফা হিসেবে গ্রহন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

কুফার লক্ষাধিক মানুষ ইমাম হোসাইন রা. কে খলিফা  হিসেবে বাইয়াতপত্র প্রেরণ করে। বাইয়াতপত্রে বলা হয়- সুন্নাহ পূণর্জীবন  এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে আপনাকে খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করা প্রয়োজন। আপনি কুফায় চলে আসুন। কিন্তু মদিনায় অবস্থানরত সাহাবী ও ইমাম হুসাইন রা. এর আত্মীয় স্বজনরা তাকে কুফায় যেতে নিষেধ করেন। ইয়াযিদের বিরোধিতায় কুফাবাসী উল্টে যেতে পারে এই আশংকায়।

হোসাইন রা. তার চাচাতো ভাই মুসলিম ইবনে আকিলকে ইরাকের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য পাঠান। তিনি পরিস্থিতি অনুকূল জানালে ইমাম হোসাইন রা. পরিবারের ১৯ জন সদস্যসহ শতাধিক সঙ্গী নিয়ে কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

এ সংবাদ ইয়াযিদের কাছে পৌঁছলে ইয়াযিদ কুফার তৎকালীন গভর্ণর  নোমান ইবনে বশীরকে পদচ্যুত করে  উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে  গভর্নরের দায়িত্ব দিয়ে এ মর্মে  নির্দেশনা দেন যে, হোসাইন রা. যেন কুফায়  প্রবেশ করতে না পারেন। ইবনে যিয়াদ  মুসলিম ইবনে আকিলকে হত্যা করে এবং সেখানকার জনগণকে কঠোর হাতে দমন করে। ইমাম হোসাইন রা. কে বাধা দিতে চার হাজার সৈন্যের বাহিনী প্রেরণ করে।

কারবালার প্রান্তরে ইবনে যিয়াদের বাহিনী হোসাইন রা. কে অবরোধ করলে তিনি বলেন, “আমি তো যুদ্ধ করতে আসিনি।” তোমাদের দাওয়াতে এসেছি। অথচ তোমরা বাইআত পরিত্যাগ করেছ। এখন আমি তোমাদের তিনটি শর্ত দিচ্ছি।

১. আমাদেরকে নিরাপদে মদীনার যেতে দাও

২. অথবা আমাদেরকে সীমান্তে যেতে দাও। সেখানে কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই করবো

৩. অথবা সরাসরি ইয়াযিদের সাথে বুঝাপড়া করি।

কিন্তু ইবনে যিয়াদ হোসাইন রা.কে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বলে। হোসাইন রা. তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।

৬১ হিজরির ১০ মহররম সকাল থেকেই ইবনে যিয়াদের বাহিনি হোসাইন রা. এর উপর আক্রমন শুরু করে এবং ফোরাত নদী থেকে পানি সংগ্রহের সকল পথ বন্ধ করে দেয়। একদিকে পানির হাহাকার, আরেকদিকে সাঁড়াশি আক্রমণ।

অবশেষে বীর বিক্রমে লড়াই করে হুসাইন রা. শাহাদাত বরণ করেন। একমাত্র ছেলে যাইনুল আবেদিন ছাড়া পরিবারের  বাকী পুরুষ সদস্যরা সবাই শহীদ হন। সিনান বা শিমার নামক পাপিষ্ঠ হোসাইন রা. তার এর মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। (নাউজুবিল্লাহ)

হুসাইন রা. এর ছিন্ন মস্তক দামেশকে ইয়াযিদের কাছে পাঠালে সে ভীত ও শংকিত হয়ে বাহ্যিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বলে  আমি তো হোসাইন রা. কুফায় প্রবেশ করতে বাধা দিতে বলেছিলাম। হত্যা করার নির্দেশ দিইনি। এরপর হুসাইন রা. এর পরিবারের জীবিত সদস্যদের সসম্মানে মদীনা মুনাওয়ারায়  প্রেরণ করা হয়।(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া -৮/১৭০ থেকে সংক্ষেপিত )

কারবালার শিক্ষা 

কারবালা জালিমের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার শিক্ষা দেয়। কারবালা সাহসিকতার অত্যুজ্জ্বল প্রতীক। কারবালা যুগে যুগে অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধে আমরণ সংগ্রাম করে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। একজন মুসলিম কখনো ভীরুতার পথে হাঁটতে পারে না। দুনিয়ার লোভে মত্ত হতে পারে না। মুসলিম মাত্রই সাহসী হবে। জুলুমের সামনে মাথা নত করবে না। দৃঢ়চিত্তে বীরবিক্রমে সামনে এগিয়ে যাবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। প্রাণ বিসর্জন  দিবে। তবুও লাঞ্চনার জীবন বেছে নেবে না।

কারবালার ময়দানে সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করা জান্নাতী যুবকদের সরদার হযরত হুসাইন রা. পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিম যুবককে এই বার্তা দিয়ে গেছেন যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে  লড়াই করবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত সংগ্রাম করে যাবে। তবুও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবে না।  

কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাটি আমাদের সেই বার্তাটাই দিয়ে যায়, কবি যা সুন্দর করে বলেছেন,

“অন্যায়ের কাছে কভু নত নাহি শির /ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ , লড়ে যায় বীর।”

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম টঙ্গী গাজীপুর
খতীব, আউচপাড়া জামে মসজিদ টঙ্গী গাজীপুর

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ