সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য-সমঝোতা কতদূর? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী উত্তর-এর সমাবেশ  আদর্শিক বিরোধে গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত নয় : মাহফুজ আলম ইসলামি চার রাজনৈতিক দলের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক বন্দোবস্তের স্থায়ী বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার

‘রাজাকারের বাচ্চা, আলবদরের বাচ্চা’-এটা জাতিবিদ্বেষী ইন্ডিয়ান প্রজেক্ট

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ

তরুণ প্রজন্মের কেউ নিজের বক্তব্যের বিরুদ্ধে কথা বললেই বিএনপির একজন আওয়ামী নেতা 'রাজাকারের বাচ্চা, আলবদরের বাচ্চা' গালিগুলো উচ্চারণ করেন। এই গালিগুলো আসলে কাদের সৃষ্টি? ৯০-এর দশকের শেষ দিক থেকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, শাহরিয়ার কবির, শামসুদ্দিন মানিকদের মতো কিছু লোক এই শব্দগুলো বাজারে নামিয়েছে। বিশেষত মুনতাসির মামুন এই শয়তানি চালটা চালু করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। যেন প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে অভিযোগ ও বিভাজন জিইয়ে রাখা যায়। এবং এদেশে ইন্ডিয়ার আধিপত্যের ক্ষেত্রটাকে মসৃণ রাখা যায়।

অনেকেই মনে করেন, এদেশ ও জাতির মধ্যে সব সময় বিভাজন সৃষ্টি করে রাখা এবং এন্টি হিন্দুস্তানি শক্তিকে দুর্বল করে রাখার জন্য ইন্ডিয়ান প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এই গালিগুলোর সৃষ্টি। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর এই বিষ বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছিল। কিন্তু পরিকল্পিতভাবেই এই বিশেষ গালাগাল, প্রো-হিন্দুস্তান 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' এবং পতিত আওয়ামী লীগের জন্য কান্নাকাটি করার দায়িত্ব বিএনপি'র দু-এক জনকে দেওয়া হয়েছে। তারা সেই দায়িত্বই পালন করছে।

দেখুন, কোনো রাজাকার-আলবদর কিংবা অমুক্তিযোদ্ধার সন্তান যদি এই মুহূর্তে এই প্রজন্মে দেশপ্রেমিক, লড়াকু, আগ্রাসনবিরোধী, মেধাবী নাগরিকের রোল প্লে করে, তাহলে একাত্তরের সময়পর্বের জন্য তাকে আঘাত করা কিংবা বিদ্ধ করার অধিকারটা কোত্থেকে আসে? তার দায় বা দোষটা কী? অপরদিকে, একাত্তরে যার বাবা যুদ্ধ করেছে, সে কিংবা তার বাবা যদি বর্তমান সময়ে দেশ ধ্বংস, মানুষ হ ত্যা, লুটপাট এবং প্রতিবেশী আগ্রাসী দেশের দাসত্বের দায়িত্ব পালন করে, তাহলে তাদের কৃতিত্ব এবং ফজিলত দাবি করার অধিকারটা কোত্থেকে আসে? তার অগ্রাধিকার ও প্রাধান্যটা কী?

'রাজাকারের বাচ্চা, আলবদরের বাচ্চা' একটা ফ্যাসিবাদী গালি শুধু নয়, এটা জাতিবিদ্বেষী ইন্ডিয়ান প্রজেক্ট। ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ঐতিহ্যগত আওয়ামী লীগারদের মধ্যেও এ গালির চর্চা ছিল না। এটা পতিত বাম ও হিন্দুস্তানি ন্যারেটিভ বিপণনকারী গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীদের চালু করা শব্দখেলা। গত দুই দশকে আপাদমস্তক আধিপত্যবাদপ্রেমী রাজনীতিক ও সংস্কৃতিশীলেরা এই শব্দটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সেটাই এখন সময় ও পরিস্থিতির চাপে তারা না পারলেও বিএনপি'র ভেতর থেকে সাবেক আওয়ামী/বামদের মুখ দিয়ে বের করাচ্ছে। এতে তারা একসাথে দুই খেলা খেলছে; বিদ্বেষ জিতিয়ে রাখছে, বিএনপিকেও ডোবাচ্ছে।

এই শয়তানিতে ফায়দাটা কার? দেশের কিংবা বিএনপি'র কোনো ফায়দা নাই। ফায়দা আওয়ামী লীগের এবং ইন্ডিয়ার দীর্ঘমেয়াদি বিদ্বেষ প্রজেক্টের। আয়রনি হলো, বিএনপির ভেতর থেকে যারা শয়তানি গালিটা লুফে নিচ্ছে, তারা নিজেরাও এর আগ-পিছ এবং উপর-নিচ ভেবে দেখছে না। কিন্তু নিজের তাৎক্ষণিক ইগো ও জেদ-পূরণের নামে দলের বিরাট বড় ক্ষতি করছে। কারণ, সাধারণ মানুষ এইসব গালিকে পতিত ফ্যাসিবাদের চরিত্র ও স্বভাব হিসেবেই জেনে এসেছে। 

আওয়ামী লীগের চাদর গায়ে জড়িয়ে বিএনপির কোনো ফায়দা নেই; ক্ষতি ছাড়া। বিএনপিকে জিয়াউর রহমানের পথেই হাঁটতে হবে। বাম, আওয়ামি, ইন্ডিয়ান ফাঁদে-স্লোগানে পাড়া দিলে বিএনপি'র কোনো লাভ হবে না। তসলিমা নাসরিনের মতো কীটের বাহবা দেখে বিএনপি যদি জিয়াউর রহমানের পথ ছেড়ে ফজলুর রহমানের পথে হাঁটতে শুরু করে তাহলে পতিতলীগের খাতাটা তাদের খুলে রাখতে হতে পারে।

লেখক: সিনিয়র আলেম সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বিশ্লেষক

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ