মাসউদুল কাদির
এসএসসি কিংবা এইচএসসি নয়, জীবনে মানুষ হওয়ার প্র্যাকটিসটাই সবচেয়ে বড়। তুমি যদি মানুষ হতে পারো তাহলে তোমাকে অভিনন্দন। পাস করলেও, না করলেও। হ্যাঁ, তুমি যদি সত্যিকারার্থে মানুষ হওয়ার প্রশিক্ষণের মধ্যেই থাকো অবশ্যই তোমার প্রতি অনেক অনেক আশীর্বাদ ও প্রাণঢালা ভালোবাসা। যারা উত্তীর্ণ হয়েছে, ভালো ফল করেছে অবশ্যই তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের চেয়ে বেশি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য তাদের সম্মানিত অভিভাবক-অভিভাবিকা এবং শিক্ষকমণ্ডলী।
এসএসসি ফলের ছবি দেখে ভিডিও দেখে আমরা যতটা না আনন্দিত হই, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি, কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখেও বিমর্ষ হই। ততটাই। ইউরোপে পাস ফেলের তেমন বালাই নেই। আমাদের সন্তানদের মতো ইউরোপিয়ানদের পরীক্ষায় পাস হওয়া নিয়ে এত টেনশন নেই, তাদেরকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয় না। ফলপ্রকাশের আগেই কোন ভার্সিটিতে ভর্তি হবে তা নির্ধারণ হয়ে যায়। একটু ভিন্ন রকম চর্চা আছে সেখানে।
বাংলাদেশের ২ দশকের শিক্ষা ব্যবস্থার ভীমরতি দেখে সবারই মন খারাপ ছিল। পরীক্ষায় এটেন্ড করলেই পাস-এমন নিয়ম থেকে বেরিয়ে এসেছে দেশের শিক্ষা বোর্ড। সত্যিকার অর্থে পড়াশোনা যে করে না তার তো ক্লাসেই টিকবার কথা নয়। পরীক্ষায় এটেন্ড করারও তো কোন কারণ নেই। এসব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ আজব, বিস্ময়কর কিছু রীতি হয়তো ধরে রেখেছে।
ক্লাসে শিশুদের মনোযোগ সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে শিশু যখন মুঠোফোন হাত থেকে রাখতেই চাইছে না, বিগত সরকার তাদেরকেই যন্ত্রে আসক্ত করে রেখেছিল। উন্নত বিশ্বে শিশুদের নিয়ে ভিন্ন রকম চিন্তা ভাবনা করা হয়। মসজিদে এলে আমরা শিশুদেরকে দৌড়াই, তাড়িয়ে দেই, আল্লাহমুখী হতে দেই না। ঈদের সালাতে ওই লোকটাই অনেক বেশি সরব - যে পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে আসে না। আগামী প্রজন্ম যদি মসজিদ না চিনে, ঈদগা না চিনে, মাহফিল না চিনে-তাহলে কার লাভ।
এরকম অনেক পদ্ধতিতে মুসলিম উম্মাহ নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। আমরা অনেক ক্ষেত্রে ভালো মনে করে খারাপ করি। কারণ, শয়তান আমাদের মধ্যে ভূমিকা পালন করে। শয়তানের কাজটাই আমরা এগিয়ে নিয়ে যাই।
আজকে যারা এসএসসি পাস করেছে, তারা একটি নতুন ভূবনে পদার্পণ করেছে। যাদের কপাল ভালো তারা তাবলিগে যাবে। নিজেকে গড়বে। আধ্যাত্মিক পথে নিজেকে গড়ার কোন বিকল্প নেই।
আজকাল সিয়াসতকর্মীদের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাবলীগের কাজ অনেক অগ্রসর। আশাপ্রদ। স্কুল নিয়ে যারা কাজ করেন, তাবলীগ করেন, তারা এসএসসি পরীক্ষার্থীদেরকে নিয়ে ভাবুন। তাদেরকে দিনের পথে আনার জন্য এটা অনেক বড় একটি অপূর্ব সময়।
ভাই বন্ধু ও সুহৃদ। আত্মহত্যা নয়। নিজের জীবন নিয়ে বাঁচো। তোমাকে যারা সামান্য সাহায্য করেছে তাদের জন্য বাঁচো। এ বিশ্বটাকে গড়বার জন্যই তোমাকে বাঁচাতে হবে। এই অল্প বয়সে কোনো ক্ষেত্রেই খেই হারিয়ে ফেলা উচিত নয়।
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ সবার মঙ্গল কামনা করছি।
লেখক: প্রিন্সিপাল, ইকরা বাংলাদেশ স্কুল, হবিগঞ্জ; চেয়ারম্যান, শীলন বাংলাদেশ
এমএইচ/