সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য-সমঝোতা কতদূর? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী উত্তর-এর সমাবেশ  আদর্শিক বিরোধে গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত নয় : মাহফুজ আলম ইসলামি চার রাজনৈতিক দলের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক বন্দোবস্তের স্থায়ী বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার

জুলাই বিপ্লবে আলেম সমাজের সংগ্রামী অবদান অবিস্মরণীয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর 

যুগে যুগে সব ধরনের বিভেদ-বৈষম্য, জুলুম, শোষণ ও অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে, দেশ ও জাতির কল্যাণে আলেম সমাজের গৌরবদীপ্ত ইতিহাস অবিস্মরণীয়। যখনই কোনো জালিমের উত্থান হয়েছে আলেম সমাজ সবধরনের ভয়কে জয় করেই তার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে শাহাদতের নজরানা পেশ করেছেন।  

ব্রিটিশবিরোধী আযাদী আন্দোলন, হাজী শরীয়তুল্লাহর ফরায়েজী আন্দোলন, জমিদার প্রথার বিরুদ্ধে শহীদ হাফেজ নিসার আলী তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা আন্দোলন, ষাটের দশকে স্বৈরাচার আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান,  ৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম, ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ২০০০ সালে ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায় বাতিলের আন্দোলন, ২০১৩ সালে নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী শাপলা চত্বরের রক্তিম ট্র্যাজেডি,  ২০২১ সালে ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনসহ আলেম-ওলামা ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের রক্তদান, কারাবরণ ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা কারো অজানা নয়। বিগত ১৭ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক পিরিয়ডেও দেশের বহু ওলামায়েকেরাম শাহাদতবরণ করেছেন। নির্মমভাবে কারাভোগ করেছেন। শিকার হয়েছেন হামলা-মামলার। তবুও দমে যাননি জাতির পথপ্রদর্শক ওলামায়ে কেরাম। 

২০২৪ সালে চাকরিতে বৈষম্য প্রতিরোধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন থেকে সূচিত ফ্যাসিবাদী জালিম শাহীর পতনের রক্তিম জুলাই অভ্যুত্থানেও ঝাঁপিয়ে পড়েন আলেম সমাজ ও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। সমস্ত বাধা-বিপত্তি, হুমকি-ধমকি, ভয়-ভীতি, এমনকি বন্ধুকের গুলি ও জেল-জুলুম উপেক্ষা করেই রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন, অংশগ্রহণ করেন। জুলাই বিপ্লবে শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, তারুণ্যদীপ্ত নবীন আলেম-ওলামাদের বীরত্ব ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ঈমানদীপ্ত ভূমিকায় আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত এমনকি বহু আলেম-হাফেজ, মাদরাসাপড়ুয়াদের শাহাদাতের নজরানা পুরো দেশবাসীকে উজ্জীবিত করেছে, বিপ্লবকে করেছে তরান্বিত। 
ফলে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিস্ট, জালিম শাহীর পতনে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীসহ আলেম-ওলামাদের নজিরবিহীন এমন আত্মত্যাগ ও একনিষ্ঠ অবদান ইতিহাসের সংগ্রামী অধ্যায়ে নতুন মাইলফলক রচনা করে। এক্ষেত্রে জুলাই বিপ্লবে এক দফার ঘোষক নাহিদ ইসলাম দেশের উম্মুল মাদারিস জামিয়া আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম  হাটহাজারীতে গিয়ে  যে কথা বলেছেন তা প্রণীধানযোগ্য। তিনি বলেছেন ‘যুগে যুগে সব জুলুমের বিরুদ্ধে আলেমসমাজের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। ২০২৪ সালেও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থান সম্ভব হতো না। জুলাই বিপ্লবে আলেম সমাজ ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আত্মদান ও বিপ্লবী অবদান যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

অতীতের মতোই জুলাই বিপ্লবেও আলেম-ওলামা ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সমুজ্জ্বল অবদানের ইতিহাস চেপে রাখার দুরভিসন্ধি রুখে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে নাহিদ ইসলামের এ উচ্চারণ অবশ্যই স্বীকৃতির এক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। সেই সাথে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ স্মরণে একটি দিবস (২১ জুলাই) বিশেষায়িত করাও নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক। 

তবে কেবলই একটি দিবসকেন্দ্রিক লৌকিকতা সর্বস্ব আচার-অনুষ্ঠানেই তৃপ্ত ও সীমাবদ্ধ হলে চলবে না। জুলাই সনদে রাষ্ট্রীয়ভাবে অবিস্মরণীয় এ অবদানের যথার্থ স্বীকৃতি নিশ্চিত করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। দেশ ও জাতির কল্যাণে আলেমসমাজের এমন সমুজ্জ্বল অবদানের ইতিহাস বিকৃতি বা চেপে রাখার কোনোই অপপ্রয়াস যেন সফল হতে না পারে সে ব্যাপারে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। সেই সাথে পাঠ্যবইসহ ইতিহাসের দালিলিক গ্রন্থেও আলেম-ওলামাদের অবদানের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস যথাযথভাবে তুলে ধরার ব্যাপারে সোচ্চার থাকতে হবে।

তথাপি জুলাই বিপ্লবোত্তর স্বাধীনতার নতুন আবহকে স্বচ্ছ রাখার ব্যাপারেও সবাইকে যত্নবান থাকতে হবে। দখলবাজি, চাঁদাবাজি, ক্ষমতালিপ্সা, কমিশন বাণিজ্য, খুন, অপহরণ ও নৈতিক অবক্ষয় রোধ করে বিপ্লবের এ চেতনা ও তাৎপর্যকে সমুন্ননত রাখতে হবে।  সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ, নাস্তিক্যবাদ কঠোরভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তির ঐক্য ধরে রাখতে সব পক্ষেরই সংযম, সহানুভূতি, উদারতা ও শিষ্টাচারিতার পরিচয় দিতে হবে।

লেখক: ছাত্রবিষয়ক সচিব, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ