সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য-সমঝোতা কতদূর? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী উত্তর-এর সমাবেশ  আদর্শিক বিরোধে গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত নয় : মাহফুজ আলম ইসলামি চার রাজনৈতিক দলের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক বন্দোবস্তের স্থায়ী বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার

কওমি মাদরাসায় অর্থনীতি শিক্ষা বিষয়ে কিছু কথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।মুফতি ইউসুফ সুলতান।।

সম্প্রতি কওমি মাদরাসার পাঠ্যক্রমে অর্থনীতি শিক্ষা নিয়ে কিছু আলোচনা সামনে এসেছে। কেউ কেউ বলছেন যে, কওমি মাদরাসা থেকে পাস করা আলেমরা অর্থনীতি বোঝেন না এবং সরকার পরিচালনা বা রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম নন। এ বিষয়ে আমার মতামত দুটি দিক থেকে।

প্রথমত, মাদরাসার ছাত্ররা মূলত শরিয়াহ নিয়ে পড়াশোনা করেন। শরিয়াহ একটি পূর্ণাঙ্গ বিষয়, যা আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক- জীবনের সবদিক নিয়ে কাজ করে। এর মধ্যে আমাদের অর্থনৈতিক জীবনের নীতিমালাও রয়েছে। অর্থনীতি একটি নতুন বিষয় মনে হতে পারে, কিন্তু সম্পদকে কীভাবে দেখতে হবে, অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান কীভাবে করতে হবে, লেনদেন-বিনিয়োগ-বিক্রয়-ইজারা কীভাবে সাজাতে হবে, মুদ্রানীতি কেমন হওয়া উচিত, দাতব্য বিষয়াদি কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও বিতরণ করতে হবে, সরকারি বাজেট কেমন হবে, কর আদায় হবে নাকি হবে না এবং এসব কীভাবে পরিচালনা করতে হবে- এই সবকিছু গত চৌদ্দ শতাব্দী ধরে কুরআন-সুন্নাহ থেকে নেওয়া নীতিমালা অনুযায়ী আলেমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

পাশাপাশি, বর্তমানে অনেক মাদরাসাতেই আধুনিক অর্থনীতি ও ফিন্যান্স পড়ানো হয়, যার মধ্যে রয়েছে ম্যাক্রো অর্থনীতি, মাইক্রো অর্থনীতি এবং ব্যাংকিং-বিমা-পুঁজিবাজার-ক্ষুদ্রঋণের মতো বিষয়গুলো। আমরা নিজেরাই Centre for Islamic Economics Studies - CIES নামে একটি মাদরাসা পরিচালনা করি, আলহামদুলিল্লাহ, যা দুই বছরের ইফতা প্রোগ্রাম। এখানে আধুনিক ইসলামি অর্থনীতি ও ফিন্যান্সে দক্ষ মুফতি তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ায় আমাদের দুটি শরিয়াহ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রয়েছে - IFA Consultancy - IFAC ও Adl Advisory - যা মূলত কওমি মাদরাসার আলেমরাই পরিচালনা করেন। আমরা উত্তর আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা), অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, তানজানিয়ার মতো দেশের নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দিয়ে থাকি। সুতরাং কওমি মাদরাসার ছাত্ররা আধুনিক অর্থনীতি পড়েন না - এই অভিযোগটি সঠিক নয়।

আরও বলতে হয় যে, আধুনিক অর্থনীতি বিভিন্ন যুগের বিভিন্ন অর্থনীতিবিদদের তৈরি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। শরিয়াহ পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে মূল নীতিমালা স্থির, কিন্তু প্রয়োগ পদ্ধতি গতিশীল। তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মূল ভিত্তি হলো শরিয়াহ যা ওহি তথা আল্লাহ-প্রদত্ত নির্দেশনা থেকে আসে। তাদের রয়েছে বিচার-বিবেচনার দৃঢ় ভিত্তি, নেতৃত্বের নীতিমালা এবং ইসলামের ইতিহাস থেকে নেওয়া আদর্শ। তাই তারা নেতৃত্ব দেওয়ার জ্ঞান ও দক্ষতা রাখেন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সমাজে নেতৃত্বের ভূমিকা ইতোমধ্যে পালন করে আসছেন।

দ্বিতীয়ত, যেকোনো নেতার মতোই, নেতৃত্বের ভূমিকায় যিনি থাকবেন, তাকে বিদ্যমান কর্মীশক্তি কাজে লাগাতে হবে - যার মধ্যে রয়েছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও কওমি-আলিয়া সব ধরনের গ্রাজুয়েটরা। এটা ঠিক নয় যে মাদরাসাপড়ুয়া নেতৃত্ব শুধু মাদরাসার কর্মীশক্তি নিয়েই গঠিত হবে - এটা বাস্তবসম্মতও নয়।

সরকারের দরকার ইখলাস/আন্তরিকতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা - যা কিছুই তারা করুক না কেন। সাথে দক্ষ পেশাদারদের প্রয়োজন যারা কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন। মাদরাসার গ্রাজুয়েটরা সাধারণত প্রথম তিনটি গুণেই সজ্জিত মাশাআল্লাহ, যা দক্ষ ব্যক্তিদের সাথে মিলিয়ে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব।

লেখক: বিশিষ্ট স্কলার ও অর্থনীতিবিদ

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ