নোমান বিন আরমান
বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতির অমিত সম্ভাবনা সেইদিনই শেষ করে দেওয়া হয়েছে, হাফেজ্জী হুজুরদের যখন বাতিল, গোমরাহ এবং শিয়াদের সমান্তরালে 'কাফির' আখ্যার রাজনীতি ও প্রোপাগান্ডা শুরু হয়। ইরান সফরকে ইস্যু করে অবিশ্বাস ও অপবাদের অপরিণামদর্শী জিঘাংসা দেশের ইসলামি রাজনীতিকে শিখড় থেকে খাদে ফেলে দেয়। সেই খাদ থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি এদেশের ইসলামি রাজনীতি।
অথচ বাংলাদেশ তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেই বিরল কৃতিত্বের আখ্যান ছিল হাফেজ্জী হুজুরদের ইরান সফর। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে ছিল অবিস্মরনীয় ঘটনা। এই সফরের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার স্পৃহাকে জীবন্ত ও তরান্বিত করতে পারত।
কিন্তু বাতিল, গোমরাহ এবং কাফির আখ্যার অন্ধ-অজ্ঞ উন্মাদনা 'ইসলামি হুকুমতের' সোনালি রাজতোরণকে বাগাড়ে পরিণত করে। সেই বাগাড়েই হাবুডুবু খাচ্ছে ইসলামি রাজনীতি। বাগাড়ে মগজ চুবিয়ে রাখা নেতারা শোনাচ্ছেন, বাংলাদেশে শরিয়া বাস্তবায়ন কখনোই সম্ভব নয়।
ইরান সফরকে অবিস্মরণীয় কেন বললাম? দুইটা দেশে যুদ্ধ হচ্ছে, সেই যুদ্ধবন্ধের দূতিয়ালির জন্য প্রায় নব্বই বছরের বয়োবৃদ্ধ এক আলেম তার শিষ্যদের নিয়ে ছুটে গিয়েছেন! দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তাদের বোঝাচ্ছেন! দুই দেশেই রাষ্ট্রীয় প্রটোকল পাচ্ছেন। যদিও সুন্নি দেশ ইরাকের চেয়ে শিয়া ইরানের প্রটোকল ছিল রাজসিক, দিলখোলা এবং হাজার বছরের পার্সিক আভিজাত্যে মোড়া। এই দৃশ্য কি এখন কল্পনা করাও সম্ভব?
এমন অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করেছিলেন ৮৬ বছর বয়সে রাজনীতিতে আসা এক 'বুড়ো' আলেম! আশির দশকে মাঠে নেমে মোড় পাল্টে দিয়েছিলেন রাজনীতির। গণতান্ত্রিক বিশ্বাসের কাছে নত শির না হয়ে, ভুংভাং না বুঝিয়ে বুজুর্গ সুলভ সততা-সরলতা এবং বীরসুলভ তেজে ঘোষণা করেছিলেন ইসলামি হুকুমত কায়েমের। এদেশের মানুষকে দেখিয়েছিলেন খেলাফতের হিরণ্ময় স্বপ্ন।
হাফেজ্জী হুজুর, আপনাকে সালাম।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও চিন্তক
এনএইট/