রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
নারীবিষয়ক সুপারিশগুলো কোরআন-হাদিসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন: জামায়াত আমির ‘১৬ বছরের জঞ্জাল দূর না করে নির্বাচন দিলে সমস্যা সমাধান হবে না’  প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা সরকারি নিবন্ধন পেল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কলরব’ ‘সিরাহ মিউজিয়াম’ চালু করছেন মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী মহাসমাবেশ সফল করতে যেসব কর্মসূচি নিয়েছে হেফাজত নারী সংস্কার কমিশন ও প্রস্তাবনা বাতিলের দাবি খেলাফত মজলিসের বনানীতে বিএনপির সঙ্গে সিপিবি-বাসদ নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হেফাজতে ইসলামের মজলিসে আমেলায় উপস্থিত ছিলেন যাঁরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন মুন্সিগঞ্জের পাপ্পু

অসুস্থের সেবার ফজিলত ও দায়ি ইলাল্লাহর করনীয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ রুহুল আমিন খান: ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য এখানে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও বিধিবিধান।

কিন্তু অনেকে ইসলামকে শুধু নামাজ,রোজা ও হজ্জ্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।কিন্তু ইসলাম কেবল এই কয়েকটি ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।বরং জনকল্যান বা জনসেবামুলক সকল কাজই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।

আর আল্লাহ তায়ালা জন কল্যাণের জন্যই ধনীদের উপর যাকাত ফরয করেছেন।হযরত মুহাম্মাদ সা. সারা জীবন মানবসেবা ও জনকল্যাণ মুলক কাজ করেছেন। এ কাজে তিনি তার উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন।

চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যসেবা জনসেবার অন্তর্ভুক্ত।ইসলাম ধর্মে রোগীদের সেবার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক ‏ বেশি।রাসুল এর জীবনী ও হাদিস পড়লে আমরা তা অনুধাবন করতে পারি।

আবূ মূসা আশ’আরী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তোমরা ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, রোগীর সেবা কর এবং কষ্টে পতিতকে উদ্ধার কর।(সহিহ বুখারি)

রোগীর সেবার মাধ্যমে দুনিয়ায় পার্থিব সম্বল যেমন অর্জিত হয় তেমনি আখেরাতের সম্বলও অর্জিত হয়।রাসুল সা. বলেন,রোগীর সেবা শুশ্রূষাকারী বেহেশ্তের ফলমূল আহরণে রত থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে না প্রত্যাবর্তন করে।(সহিহ মুসলিম)

আর চিকিৎসকরা রোগীর সেবা করার মাধ্যমে অতি সহজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন।কেননা রোগীর সেবা করা মানেই আল্লাহর সেবা করা। আবু হুরায়রা  রা.  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসূল সা. ইরশাদ করেন

কেয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করো নি।’

বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক। আপনিতো বিশ্বপালনকর্তা কিভাবে আমি আপনার শুশ্রূষা করব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাও নি। তুমি কি জান না, যদি তুমি তার শুশ্রূষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে।?

‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাও নি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, তুমি হলে বিশ্ব পালনকর্তা, তোমাকে আমি কীভাবে আহার করাব?

তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাও নি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে বে আজ তা প্রাপ্ত হতে।?

হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাও নি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, তুমি তো রাব্বুল আলামীন তোমাকে আমি কীভাবে পান করাব?

তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাও নি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে। (মুসলিম : ৬৭২১; সহিহ ইবন হিব্বান : ৭৩৬)

ইসলাম ধর্মে রোগীর সেবা করা মানেই আল্লাহর সেবা করা।তারপরও রোগীর সেবায় ডাক্তারদের অবহেলা বেশি পরিলক্ষিত হয়।

আমাদের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ধর্মীয় অনেক প্রতিষ্ঠান থাকলেও ধর্মীয় কোন হাসপাতাল নেই।যেখান থেকে রোগীরা কম খরচে ভাল মানের চিকিৎসা পেতে পারে।অন্যদিকে ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের ভেলোরে আছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিখ্যাত ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজে ও হসপিটাল CMC)।

আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্রী নারায়ণী হসপিটাল।ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেনীর মানুষ সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছে।সেখানে চিকিৎসা খরচ আমাদের দেশের তুলনায় অনেক কম।

তাছাড়া সেখানের রোগীর সাথে ডাক্তারের আচরণ আপন মা-বাবার আচরণের ন্যায় মানসিক প্রশান্তিদায়ক।যা আমাদের দেশের হাসপাতালে প্রত্যাশা করা বোকামি।তাই লোক জন সেখানের ডাক্তারদেরকে দেবতার ন্যায় শ্রদ্ধা করে।সেই ধর্মের প্রতি তাদের একটা শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয়।

কিন্তু আমাদের দেশে এমন( ইসলাম)ধর্মীয় কোন মেডিকেল কলেজ নেই।যদি থাকতো তাহলে নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজন যথাযথ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতো না।চিকিৎসা খরচ বহন করে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন সর্বস্বান্ত হতো না।

আমরা যদি বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের ইতিহাস পড়ি,তাহলে দেখতে পাই;খান জাহান আলীসহ অন্যান্য ইসলাম প্রচারকগণ মসজিদ নির্মাণের পাশাপাশি পুকুর খনন,রাস্তাঘাট ও বাঁধ নির্মাণ সহ নানা জনকল্যাণ মুলক কাজ করে মানবসেবা করেছেন, জনগণকে ইসলাম গ্রহনে উদ্বোধ্য করেছেন।

তাই আমরা যারা দা’য়ী ইলাল্লাহর ভূমিকা পালন করি,তাদের উচিত ইসলামকে শুধু মসজিদ আর মাদরাসার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, হাসপাতালসহ জনসেবা মুলক সকল কাজে সম্প্রসারণ করা।

ডাক্তারের কানে পৌঁছে দেওয়া মানব সেবা ফজিলত।শুধু বড় বড় মসজিদ, মাদ্রাসা নয়,বরং জনসেবার জন্য ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ ( CMC) ও শ্রী নারায়ন হসপিটালের ন্যায় হসপিটাল প্রতিষ্ঠা করার প্রচারণা চালানো।

লেখক: ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ