রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫ ।। ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ২ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য: ইবনে শাইখুল হাদিস ৪-৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা পরস্পরের জীবনসঙ্গী হিসেবে সফলতার মন্ত্র ফখরুলের ‘দক্ষিণপন্থীদের উত্থান’ মন্তব্যে কড়া সমালোচনা ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিবের পি আর পদ্ধতিতেই জবাবদিহিতামূলক সরকার কায়েম হবে: পীর সাহেব চরমোনাই  প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠক বেফাকের ৪৯তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষার নিবন্ধনের কাগজপত্র বিতরণ শুরু বাসচাপায় মাদরাসা ছাত্রী নিহত, সড়ক অবরোধ একা পারছি না, বিভিন্ন পর্যায়ে আলেমদের অংশগ্রহণ জরুরি: ধর্ম উপদেষ্টা জুলাই সনদে মাদরাসা ছাত্রদের স্বীকৃতিও দিতে হবে: গাজী আতাউর রহমান

মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মানেই অনিশ্চিত গন্তব্যের যাত্রী নয়, চাই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| ওলিউল্লাহ্ মুহাম্মাদ ||

সমাজে এখনও একটি প্রচলিত মনোভাব রয়েছে—“মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তারা দয়ার পাত্র, সমাজে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারে না।” করুণার দৃষ্টিতে দেখা হয় তাদের। পরিবার-পরিজনের আস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে, প্রতিবেশীরা পর্যন্ত ভ্রুকুটি করে কথা বলে। রাস্তাঘাটে, যানবাহনে, জনসমাগমে এমনকি আত্মীয়তার সম্পর্কেও অবমূল্যায়নের দৃষ্টান্তের শেষ নেই। 

অনেকেই মনে করেন—এরা সবসময় যাকাতের অর্থ খোঁজে, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর যোগ্যতা এদের নেই, এদের ভেতরে সৃজনশীলতা বলে কিছু নেই। কেউ কেউ তো আরও দূর গিয়ে বলে ফেলেন—“এরা তো সমাজে বোঝা, রাষ্ট্রীয় বা অর্থনৈতিক অঙ্গনে এদের দিয়ে কিছু হবে না।”

এই ধরণের চিন্তা শুধু অজ্ঞতা ও অবহেলার ফলই নয়, বরং এটি একটি গভীর ভ্রান্তি। কারণ, বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন, বরং বলা যায়—সম্পূর্ণ বিপরীত।

কওমি মাদ্রাসা হল এক প্রকার আদর্শ গঠনের শিক্ষাকেন্দ্র। যেখানে শিশুকাল থেকেই একজন মানুষকে আত্মসংযম, শৃঙ্খলা, অধ্যবসায় এবং আখিরাতমুখী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে গড়ে তোলা হয়। এখানকার ছাত্রদের দিন শুরু হয় ফজরের আজানের আগেই, আর রাত শেষ হয় ইলম অর্জনের গভীর তপস্যায়। এদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজেকে গড়ে তোলার এক নিরন্তর সাধনায়। এই যে নৈতিক দৃঢ়তা, আত্মনিয়ন্ত্রণ আর ইলমী গভীরতা—এসবই এক একজন ছাত্রকে ভবিষ্যতে করে তোলে একটি উজ্জ্বল পথের যাত্রী।

সমসাময়িক কওমি ছাত্ররা আজ নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখছে না। অনেকে শুধু ইমামতির গণ্ডিতে আবদ্ধ না থেকে আধুনিক দক্ষতা অর্জনের দিকে ঝুঁকছে। তারা কম্পিউটার শিখছে, বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দ্বীনের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। বহু মাদ্রাসা ছাত্র আজ ইউটিউব, ফেসবুক, অনলাইন পত্রিকায় দ্বীনের প্রচার করছেন । কিছু ছাত্র লেখালেখির মাধ্যমে সাহিত্যাঙ্গনে পরিচিত হচ্ছেন। কেউ দক্ষ দাঈ, কেউ সফল মুফাসসির, আবার কেউ গঠিত হয়েছেন স্বনামধন্য গবেষক হিসেবে। এমনকি কওমি ধারার অনেকেই সাংবাদিকতার মহান পেশায় নির্ভরযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন।

এদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা নিজেদের এলাকায় শিক্ষাবিস্তার, সামাজিক নেতৃত্ব কিংবা নৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। অনেকেই ইসলামী অর্থনীতির বিষয়ে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে আন্তর্জাতিক বিশ্বে পরিচিত হচ্ছেন, কেউ ইসলামী রাজনীতির পরিমন্ডল নিয়ন্ত্রণ করছেন। কেউ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন। অনেক হাফেজে কুরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সম্মান বিশ্বদরবারে তুলে ধরছেন।

দাওরায়ে হাদীসের পরে অনেকেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে গিয়ে উচ্চতর গবেষণায় যুক্ত হচ্ছেন। কারও কারও উদ্যোগে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের হিফজুল কুরআন বিভাগ, ইসলামিক শিশু একাডেমী, অনলাইন দাওয়াহ প্লাটফর্ম, এ ছাড়া উন্নয়নমূলক বিভিন্ন সামাজিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষার প্রশিক্ষণ, স্বাবলম্বী প্রকল্প, বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রমসহ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গনে ব্যাপক অবদান রেখে আসছেন। এসব উদ্যোগ কেবল ইলম চর্চা নয়, বরং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের বাস্তব পাথেয়।

কওমি শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রের জন্য বোঝা নয়—তারা সম্ভাবনার বাতিঘর। তাদের চিন্তা-চেতনা যতটা পরিশীলিত, ত্যাগ-তিতিক্ষা যতটা গভীর, তা সুষ্ঠু প্ল্যাটফর্ম পেলে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার উপযোগী। আজ প্রয়োজন শুধু সমাজের মানসিকতা পরিবর্তনের—করুণা নয়, প্রয়োজন সম্মান ও বিশ্বাস। অবজ্ঞার দৃষ্টিতে নয়, প্রয়োজন সম্মানিত দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদের দেখা।

প্রশ্ন উঠতে পারে—তাহলে সবাই কি সফল? না, শুধু কওমি নয়—কোনো শিক্ষাব্যবস্থার সবাই সফল হয় না। তবে যার মধ্যে যোগ্যতা, উদ্যম ও চিন্তার গভীরতা থাকে—সে যেকোনো ধারাতেই সফলতার পথ তৈরি করতে পারে। কওমি শিক্ষার ছাত্ররা আজ যে কঠোর অধ্যবসায় ও আত্মত্যাগ নিয়ে ইলম হাসিল করে, তাতে তারা চাইলে দ্বীনের পাশাপাশি দুনিয়াতেও দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়াতে পারেন।

মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা একদিন ভবিষ্যতের আলোকবর্তিকা হবে, নেতৃত্ব দিবে নৈতিক সমাজ গঠনে—এই বিশ্বাসেই আমরা গড়ব এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সমাজ।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ