আওয়ার ইসলাম: পাবনায় গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও থানায় জোর করে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্তে ধর্ষণ ও থানায় বিয়ে দেয়ার প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে।
রোববার সন্ধ্যায় পাবনার জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দেন তিন সদস্যের কমিটি। পরে রাত ৮টায় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, ধর্ষণ ও থানায় বিয়ে হওয়ার ঘটনায় গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সেসব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত কমিটি কাজ করেছে। তদন্তে প্রকাশিত সংবাদের প্রাথমিক সত্যতা মিলিছে। ঘটনাকে ‘সিরিজ রেপ’ (পালাক্রমে ধর্ষণ) হিসেবে মন্তব্য করেন জেলা প্রশাসক।
তদন্ত প্রতিবেদনে চারটি পর্যবেক্ষণ এবং দুটি মতামত দিয়েছে কমিটি। তবে কী আছে পর্যবেক্ষণ ও মতামতে তা জানাতে রাজি হননি। তদন্ত প্রতিবেদন রাতেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে পাঠানো হবে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, গণমাধ্যমে ঘটনা উঠে না আসলে হয়ত ধামাচাপা পড়ে যেত। তিনি গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
মোবাইলে প্রেমের সূত্র ধরে পাবনা সদর উপজেলার সাহাপুর যশোদল গ্রামের এক নারীকে গত ২৯ আগস্ট রাতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে রাসেল নামের এক যুবক। তারপর কয়েকজন ওই নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওই গৃহবধূর। পরে ওই ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে ৫ সেপ্টেম্বর পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ অভিযুক্ত রাসেলকে আটক করে। তবে মামলা নথিভুক্ত না করে ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে থানা চত্বরে অভিযুক্তের বিয়ে দিয়ে ঘটনা মীমাংসার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ ওঠে সদর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ৯ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি গঠন ও মামলা নথিভুক্ত করা হয়। মামলার পর বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান অভিযুক্ত রাসেলসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। আর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবাইদুল হককে প্রত্যাহার ও উপ-পরিদর্শক একরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
একই দিন এ ঘটনা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে আসার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দৃষ্ঠিগোচরে আসে। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে পাবনা জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।
পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ নেওয়াজকে আহ্বায়ক এবং পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান ও পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম আবু জাফরকে সদস্য করা হয়। কমিটি গঠনের পর থেকে তারা কাজ শুরু করেন।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ নেওয়াজ জানান, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবানবন্দি নেয়া করা হয়। তদন্ত শেষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
-এএ