রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫ ।। ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ২ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য: ইবনে শাইখুল হাদিস ৪-৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা পরস্পরের জীবনসঙ্গী হিসেবে সফলতার মন্ত্র ফখরুলের ‘দক্ষিণপন্থীদের উত্থান’ মন্তব্যে কড়া সমালোচনা ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিবের পি আর পদ্ধতিতেই জবাবদিহিতামূলক সরকার কায়েম হবে: পীর সাহেব চরমোনাই  প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠক বেফাকের ৪৯তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষার নিবন্ধনের কাগজপত্র বিতরণ শুরু বাসচাপায় মাদরাসা ছাত্রী নিহত, সড়ক অবরোধ একা পারছি না, বিভিন্ন পর্যায়ে আলেমদের অংশগ্রহণ জরুরি: ধর্ম উপদেষ্টা জুলাই সনদে মাদরাসা ছাত্রদের স্বীকৃতিও দিতে হবে: গাজী আতাউর রহমান

‘অখণ্ড ভারত’ মতবাদ এই অঞ্চলের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগ্রহিত

হামিদ মীর

সংখ্যাগত তথ্য-উপাত্ত সত্যিই বিস্ময়কর। আয়তন, জনসংখ্যা ও অর্থনীতির দিক থেকে ভারত একটি বিশাল দেশ হলেও প্রতিরক্ষা শক্তির দিক থেকে পাকিস্তান কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। বরং কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, আধুনিক পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষমতা ও পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সাম্প্রতিককালের সাফল্যের কারণে পাকিস্তান কিছু ক্ষেত্রে ভারতের ওপর প্রাধান্য অর্জন করেছে। ভারতের বর্তমান শাসকরা, যারা অখণ্ড ভারতের মতবাদে বিশ্বাসী, এই প্রাধান্য মানতে নারাজ। তারা এই প্রাধান্যের ছায়া দূর করতে প্রোপাগান্ডাকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। যদিও এই কৌশল ভারতে কার্যকর হচ্ছে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তেমন সফল হচ্ছে না।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পাকিস্তান কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত হওয়ার এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে, কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া এখনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনায় ব্যস্ত। এই সম্মেলন হয়েছিল মিত্তল ইনস্টিটিউট অফ সাউথ এশিয়ায়, যা ২০১৭ সালে ভারতীয় ব্যবসায়ী লক্ষ্মী মিত্তলের ২৫ মিলিয়ন ডলারের অনুদানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এই ইনস্টিটিউট থেকে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক হিতেশ হাতিও একজন ভারতীয় হওয়ায় সেখানে প্রতি বছর ‘ইন্ডিয়া কনফারেন্স’ আয়োজিত হতে থাকে।

১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত হয় ইন্ডিয়া কনফারেন্স। এরপর পাকিস্তানি শিক্ষার্থীরা ‘পাকিস্তান কনফারেন্স’ আয়োজনের অনুমতি চায়। যদিও এটি শুরুতে গুরুত্ব পায়নি, কারণ হার্ভার্ডসহ সমগ্র আমেরিকায় পাকিস্তানি শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ১০ হাজার ৯৮৮; যেখানে ভারতীয় শিক্ষার্থী তিন লাখ ৩১ হাজার ৬০২ জন। মিত্তল ইনস্টিটিউট ধারণাই করতে পারেনি, পাকিস্তানি শিক্ষার্থীরা সত্যিই একটি সম্মেলন আয়োজন করতে পারবে।

তবু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অনুমতি মেলে। শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেয়, এই সম্মেলন হবে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রচার মঞ্চ নয়, বরং পাকিস্তানের সমস্যাগুলোর সমাধান খোঁজার চেষ্টা হবে। ইনস্টিটিউট ২৭ এপ্রিল (রোববার) সম্মেলনের দিন নির্ধারণ করে যাতে কম লোক অংশ নেয়। কিন্তু আয়োজকরা ড. মেগান ও সুলিভানসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত একাডেমিক ও কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানে আনেন। পাকিস্তানের অর্থনীতি বিষয়ক আলোচনায় বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নেন। ড. আয়েশা জালালের সঙ্গে হিতেশ হাতির আলোচনা হয় পাকিস্তানের ইতিহাস নিয়ে।

সবচেয়ে আলোচিত সেশন ছিল পাকিস্তানের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তেহরিক-ই-ইনসাফের সেক্রেটারি জেনারেল সালমান আকরম রাজা যখন শক্তিশালী বক্তব্য দেন, তখন হল করতালিতে মুখর হয়। এমনকি সরকারের প্রতিনিধিরাও দাঁড়িয়ে সম্মান জানান।

আমি যখন পাকিস্তানি দূতাবাসের এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করি, মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত সালমান রাজার প্রতি হার্ভার্ডে এমন সম্মান দেখে তাঁর অনুভূতি কী ছিল? তিনি বুকে হাত রেখে বলেন, ‘পাকিস্তানের রাজনীতি পাকিস্তানেই থাকুক। এখানে রাজা সাহেব পাকিস্তানের প্রতিনিধি ছিলেন, তাঁর সম্মান মানে পাকিস্তানের সম্মান।’

হার্ভার্ডে সফল পাকিস্তান কনফারেন্স যেন ভারতের জন্য একটি বিস্ফোরণ ছিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবিন রাফেল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে 'প্রথমে আক্রমণ' নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করেন। ভারতীয় মিডিয়া প্রথমে হার্ভার্ডের সমালোচনা করে, এরপর লক্ষ্মী মিত্তলকে অনুরোধ করে যেন প্রতিষ্ঠানটির নাম বদলে ‘মিত্তল ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া’ করা হয়।

একজন সিনিয়র প্রফেসর জানান, এমন প্রস্তাব আগেও এসেছিল। কারণ বিজেপি নেতৃত্ব পুরো দক্ষিণ এশিয়াকে ‘গ্রেটার ইন্ডিয়া’ হিসেবে দেখছে। তিনি আমায় জিজ্ঞাসা করেন, ‘পাকিস্তানে কি কখনো অখণ্ড ভারতের মতবাদ নিয়ে কোনো সম্মেলন হয়েছে?’ আমি বলি, ‘না। কাশ্মীর নিয়ে হয়তো হয়, কিন্তু অখণ্ড ভারত নিয়ে নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমেরিকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় প্রফেসর ও বিশেষজ্ঞদের আধিপত্য আছে। এই লবি ইসরায়েলি লবির সহায়তায় চীনের প্রভাব কমাতে ভারতকে সামনে আনার চেষ্টা করছে।’

 

তিনি আরও বলেন, তিন বছর আগে এক ভারতীয় কূটনীতিক তাঁকে বলেছিলেন যে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, বার্মা ও আফগানিস্তান আসলে ভারতেরই অংশ ছিল। তখন তিনি নিজে গবেষণা করে জানতে পারেন— ‘অখণ্ড ভারত’ কোনো ঐতিহাসিক সত্য নয়, বরং কল্পকাহিনি।

আমার যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের আগে, নিউ ইয়র্কের এক থিংক ট্যাঙ্কে আমাকে 'অফ দ্য রেকর্ড' আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানেও ‘অখণ্ড ভারত’ বারবার আলোচনায় আসে। ধীরে ধীরে আমেরিকার কূটনৈতিক মহলে এই উপলব্ধি তৈরি হচ্ছে যে, ভারত-চীন দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে ভারত এই মতবাদ আমেরিকায় ছড়িয়ে দিতে চাইছে। এটি শুধু পাকিস্তান নয়, বরং বাংলাদেশের, শ্রীলঙ্কার, নেপালের, মিয়ানমারের ও আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। আপাতত এটি আমেরিকায় তেমন গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও, পাকিস্তানসহ সব টার্গেট হওয়া দেশগুলোর উচিত একটি সম্মিলিত কৌশল গঠন করা। কারণ এই মতবাদ একদিন বিশ্বকে পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

[হামিদ মীর পাকিস্তানের বিখ্যাত সাংবাদিক। উর্দু দৈনিক জং থেকে লেখাটি অনুবাদ করেছেন: সাইমুম রিদা]

আরএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ