আবু তালহা তোফায়েল।।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রিয় হাবিব ইসলামের সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ সা. পৃথিবীতে আগমনের পরেই সিজদায় লুটে পড়েন, ৪০ বছরে নবুওয়ত প্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাঁর উম্মতের জন্য কেঁদে গেছেন। উম্মাতি উম্মাতি বলে বলে সারাটা জীবনই উৎসর্গ করে দিয়েছেন।
এমন দরদী নবী রহমতুল-লীল আলামিনের সৌভাগ্যবান উম্মত আমরা। যে নবী সা. আমাদের জন্য মিরাজের রজনীতে, এমনকি মৃত্যুর খানিকটা পূর্বে কষ্টের পৃষ্ঠেও আমাদের জন্য কেঁদে গেছেন, আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে গেছেন; আর সেই নবীর সা. উম্মত হয়ে তাঁর আদর্শকে লালন করা তো দূরের কথা বরং তাঁর সীরাত সম্পর্কেই আমরা অজ্ঞ। তাঁর ক্যারিয়ার, তাঁর জীবনি/সিরাত কী, তা জানিনা আমরা; একটা বার জানার চেষ্টাটুকুও করি না।
গতকাল রোববার (১৭ জানুয়ারি) সিলেটের মোগলাবাজার থানাধীন সিরাতুন নবি সা. বাস্তবায়ন কমিটির মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট দায়ী শায়খুল হাদীস আল্লামা নজরুল ইসলাম কাসেমী উপরিউক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি আরও বলেন, নবী সাঃ এর সিরাত সম্পর্কে বললে একঘন্টা বা দেড়ঘন্টায় কিছুই বুঝাতে পারবো না। শুধু ধারণাটা দিতে পারি। রাসুল সা. এর নাতি হযরত হাসান ও হুসাইন রা. কলিজার টুকরো ছিলেন। কাঁদে করে ঘুরতেন, ভালোবেসে বুকে আগলে রাখতেন। অথচ রাসুল সা. এর মৃত্যুর সন্নিকটে তাঁর পরিবারে খাবার নেই, ৯জন বিবিদের ঘর খাবার শূন্য।
রাসুল সা. এর কলিজার টুকরো মেয়ে হযরত ফাতেমা রা. এর পরিবারে খাবার তাড়নায় কাতরাচ্ছেন, হযরত আলী উপোস, কলিজার টুকরো নাতি হযরত হাসান ও হুসাইন রা. উপোস। আয়েশা রা. এর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন যে আমাদের ক্ষুধার তাড়না এমন ছিলো যে, যদি ঘরে বাতি জ্বালানোর কোনো তেল থাকত, তাহলে সেই তেল পান করে ক্ষুধা নিবারণ করতাম।
এমন খাবার শূন্য ও ক্ষুধার্ত সবাই; এমনকি রাসুল সা. নিজেও ক্ষুধার্ত। এদিকে মৃত্যুর যন্ত্রণায় ভুগছেন, কিন্তু তখনও রাসুল সা. তার পরিবারের জন্য কাঁদেননি, উম্মতের জন্য কেঁদেছেন, উম্মতের জন্য ফরিয়াদ জানিয়েছেন। এমনকি কিয়ামতের দিনও রাসুল তাঁর উম্মতের জন্য উম্মতি উম্মতি বলে সিজদায় লুটে পড়বেন, যতক্ষণ না একজন উম্মতও তাঁর জাহান্নাম থেকে মুক্তি না পাবে, ততক্ষণ সিজদায় লুটে থাকবেন। অথচ মুসা আঃ এর মতো নবীও ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি বলে কাঁদবেন।
তিনি যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, হে যুবক তোর পাঁজরে শক্তি আছে, ইচ্ছে করলে তুই যা চাইবে তাই করতে পারবে। যৌবন সময়টা খুবই দামী। তোর জন্যই তো নবী সা. এতো কেঁদেছেন, তোকে না মেরাজ রজনীতে আর না মৃত্যুর যন্ত্রণায়ও ভুলেছেন, তোর জন্যই তো কেঁদেছেন হে যুবক। নবীর জীবনী কি বলবো? সিরাত সম্পর্কে, নবীর ক্যারিয়ার সম্পর্কে জানো হে যুবক। তার আদর্শ বাস্তবায়ন কর তোমার জীবনে। তুমি জাননা যে তোমার রাসূলের পথে তোমার প্রভুর পথে দৈনিক ৫ বার ডাকা হয়। কিন্তু তুমি তো সাড়া দাওনা। তুমার নেতা, তুমার ভাই, তুমার বাবা, তুমার মা, তুমার স্ত্রী, সন্তানাদি যখন ডাক দেয়, তখন তোমার অফিস, ব্যবসা, হাট-ঘাট, খামার-ক্ষেত সবকিছু রেখে তাদের ডাকে সাড়া দাও, অথচ আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য দৈনিক ৫ বার ডাকা হয়, আর তুমি সাড়া দাওনা।
কেনো হে যুবক? তোমার জন্য তোমার নবি সা. এতো কিছু করে গেছেন, আর তাঁর হাবিব তোমাকে ডাকছে, কীভাবে সাড়া না দিয়ে মুখ ফিরিয়ে চলে যাও? চাইলে তুমি এক যুবক মসজিদে যেতে পারবে সাথে সাথে আরও ১০টা যুবককে মসজিদে নিয়ে যেতে পারবে। সেই শক্তি তোমার আছে হে যুবক।
যৌবনের আমলগুলোকে নিয়ে আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের কাছে গর্ববোধ করেন। তাই আর হেলায়-খেলায় সময়টা কাটিওনা, ফিরে এসো তোমার দরদী নবীর পথে। তাঁর জীবনী বেশি বেশি করে পাঠ করো, তাঁর জীবনী পাঠ করলে তোমরা বুঝতে পারবে যে, আল্লাহর রাসূল সা. তোমার জন্য কী করে গেছেন, তখন আমল করতে আগ্রহবোধ করবে। তাই তাঁর জীবনী পাঠ করো। শান্তির সুগম পথে আহ্বান করছি, ফিরে এসো হে যুবসমাজ তোমার প্রভুর পথে।
-এটি