কাজী আব্দুল্লাহ ।।
শেষ হল ২০ বছরের যুদ্ধ৷ আফগানিস্তানের মাটি ছেড়ে দেশে ফিরে গেল সব মার্কিন সেনা৷ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ অগাস্টের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই আফগানিস্তান থেকে সোমবার সেনা প্রত্যাহার সম্পূর্ণ করল আমেরিকা৷ টুইট করে নিজেই এই কথা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন৷ আমেরিকা এবং ন্যাটো বাহিনী কাবুল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাজি ফাটিয়ে রীতিমতো উৎসবে মাতেন তালেবানরা৷
টুইটারে দেশের সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে জো বাইডেন লিখেছেন, আফগানিস্তানে আমাদের সামরিক উপস্থিতি শেষ হল৷ গত ১৭ দিনে আমেরিকার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আকাশপথে সবথেকে বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ সম্পন্ন করেছে আমাদের বাহিনী৷ ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি মার্কিন নাগরিক, সহযোগী দেশগুলির নাগরিক এবং আমেরিকার আফগান সহযোগীদের উদ্ধার করা হয়েছে ৷ এই কাজ করতে গিয়ে অতুলনীয় সাহসিকতা, পেশাদারিত্ব এবং দৃঢ়তার ছাপ রেখেছে আমাদের সেনাবাহিনী৷
প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ কথা বললেও পেন্টাগনের তরফে জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি স্বীকার করে নিয়েছেন, যত মানুষকে আফগানিস্তান থেকে উদ্ধার করা যাবে বলে আশা করা হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি৷
সোমবার কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উদ্ধারকারী বিমানে মার্কিন সেনা, কমান্ডোরা ছাড়াও আফগানিস্তানে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূতও ফিরে যান৷ এদিকে আফগানিস্তানের মাটি ছাড়ার আগে কাবুল বিমানবন্দরে তাদের হেলিকপ্টার এবং বিমানগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে গিয়েছে আমেরিকা বাহিনী।
সোমবার আফগানিস্তান ছাড়ার সময় একে একে যুদ্ধবিমানে চড়েন মার্কিন সেনারা ৷ তাদের মধ্যে সবার শেষে বিমানে ওঠেন মেজর জেনারেল ক্রিস ডো ডোনাহুয়ে৷ সেই ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। তিনি ৮২তম এয়ারবোর্ন ডিভিশনের কমান্ডার। এভাবেই দীর্ঘ দু’দশকের আগ্রাসন শেষে যেনো খালি হাতেই ফিরছে আমেরিকান সৈন্যরা।
তালিবানদের তরফে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ৩১ অগাস্টের পর আফগানিস্তানে আমেরিকা-সহ কোনও বিদেশি বাহিনীর থাকা চলবে না৷ আমেরিকার সঙ্গে এই মর্মেই চুক্তি হয়েছে তাদের৷ শুধু সামরিক বাহিনীকে ফিরিয়ে নেওয়াই নয়, আফগানিস্তানে নিজেদের কূটনৈতিক উপস্থিতিও বন্ধ করতে বাধ্য হলো আমেরিকা৷ এই সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ আপাতত কাতার থেকে চালানো হবে৷
তবে এত তাড়াহুড়ো করে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণার জন্য বাইডেন প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তাঁর মতে, এই ভাবে সেনা প্রত্যাহারের মধ্যে দিয়ে নিজেদের অযোগ্যতাই প্রমাণ করল বাইডেন প্রশাসন৷ ট্রাম্প দাবি করেছেন, আফগানিস্তানে থাকা আমেরিকার সমস্ত সাজ, সরঞ্জামও অবিলম্বে ফিরিয়ে দিতে হবে৷ যার সম্মিলিত মূল্য প্রায় ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প৷
৯/১১ হামলার পর জঙ্গিদের আস্তানা আছে এমন অপবাদ দিয়ে আফগানিস্তানে সেনা পাঠিয়েছিল আমেরিকা৷ তার বিশ বছর পর যে অবস্থায় মার্কিন সেনা আফগানিস্তানের মাটি ছাড়ল, তাতে প্রশ্ন থেকেই যায় আফগানিস্তানে আমেরিকার সেই লক্ষ্যপূরণ আদৌ কতটা সম্ভব হয়েছে, নাকি এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে হাজারো সামরিক ও বেসামরিক মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেললো আমেরিকা! গোটা বিশ্ব জুড়েই এখন সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছ৷ সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট
-এটি