।।মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।।
ঢাকা শুধু একটি শহর নয়, এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক বিশাল গ্রন্থাগার। এই শহরের অলিগলি, পাড়া-মহল্লা কিংবা বিখ্যাত সড়কগুলো যেন যুগে যুগে জমে থাকা কাহিনির নীরব সাক্ষী। চকবাজার, মোহাম্মদপুর, গুলিস্তান, শাঁখারীবাজার, কিংবা সূত্রাপুর—প্রতিটি নামের পেছনে লুকিয়ে আছে একেকটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সামাজিক প্রভাব কিংবা সংস্কৃতির ছাপ। এই ফিচারে আমরা ঘুরে দেখব ঢাকার বিভিন্ন এলাকার নামকরণের নেপথ্য গল্প, যেগুলো শুধু নাম নয়, বরং ইতিহাসের দরজা খুলে দেয় আমাদের সামনে।
পিলখানা : ফারসি ভাষায় ‘পিল’ মানে হাতি, আর ‘খানা’ মানে ঘর বা জায়গা। মুঘল আমলে এই এলাকায় হাতি রাখা ও প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো, তাই নামকরণ হয় 'পিলখানা'।
এলিফ্যান্ট রোড : পিলখানা থেকে হাতিদের হাতিরঝিলে গোসল করাতে নিয়ে যাওয়া হতো, এরপর রমনা পার্কে রোদ পোহাতে। হাতিদের এই যাতায়াতের পথটি পরিচিতি পায় 'এলিফ্যান্ট রোড' নামে।
মহাখালী : এই এলাকার নাম এসেছে 'মহা কালী' নামের একটি মন্দির থেকে, যা এখানে অবস্থিত ছিল।
সূত্রাপুর : 'সূত্রধর' অর্থাৎ কাঠের কাজ করা কারিগরদের বসবাস ছিল এই এলাকায়। তাদের নামানুসারে এলাকার নাম হয় 'সূত্রাপুর'।
গেণ্ডারিয়া : একটি মত অনুযায়ী, ইংরেজদের দেওয়া 'গ্র্যান্ড এরিয়া' নামটি স্থানীয়রা উচ্চারণে পরিবর্তন করে 'গেণ্ডারিয়া' করে নেয়। অন্য মতে, এখানে প্রচুর গেণ্ডারি বা আখ জন্মাত, সেখান থেকে নামটি এসেছে।
মোহাম্মদপুর : দেশ বিভাগের পর অবাঙালি মুসলিমরা এখানে বসবাস শুরু করেন। মহানবী (সা.)-এর নামানুসারে এলাকার নাম রাখা হয় 'মোহাম্মদপুর'।
ধানমণ্ডি : ব্রিটিশ আমলে এখানে ধানের হাট বসত। ফারসি ভাষায় 'মণ্ডি' মানে বাজার। এভাবে 'ধান' ও 'মণ্ডি' মিলিয়ে নাম হয় 'ধানমণ্ডি'।
পরীবাগ : নবাব সলিমুল্লাহর সৎ বোন পরীবানুর নামে এই এলাকার নামকরণ। তিনি এখানে একটি বাগানবাড়ি গড়ে তোলেন, যা থেকে 'পরীবাগ' নামটি আসে।
ফার্মগেট : ব্রিটিশ সরকার কৃষি ও পশুপালন গবেষণার জন্য এখানে একটি খামার স্থাপন করে। সেই খামারের প্রধান ফটক বা 'গেট' থেকে এলাকার নাম হয় 'ফার্মগেট'।
বকশিবাজার : মুঘল আমলে 'বকশি' নামে পরিচিত রাজকর্মচারীরা বেতন বণ্টনের দায়িত্বে ছিলেন। তাদের বসবাস ও বাজার স্থাপনের কারণে এলাকাটি 'বকশিবাজার' নামে পরিচিত হয়।
হাতিরঝিল : হাতিদের গোসল করানোর জন্য ব্যবহৃত ঝিলটি 'হাতিরঝিল' নামে পরিচিতি পায়।
এনএইচ/