বিশেষ প্রতিনিধি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের মনোভাব জানতে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত ‘পালস সার্ভে ৩’-এর ফলাফল সোমবার (১১ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সেই জরিপে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান সেটা জানা গেছে। তবে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান বেশ ভালো হলেও অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর অবস্থান তলানিতেই রয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, সংস্কার, নির্বাচন ও রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা’ বিষয়ক এই জরিপের ফল প্রকাশিত হয়। বিআইজিডি ও ভয়েস ফর রিফর্ম যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। জরিপের ফল তুলে ধরেন বিআইজিডির ফেলো অব প্র্যাকটিস সৈয়দা সেলিনা আজিজ।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন, এই প্রশ্নে ১২ শতাংশ বিএনপি, ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ জামায়াতে ইসলামী এবং ২ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কথা বলেছেন। আট মাস আগে গত অক্টোবরে একই প্রশ্ন করা হলে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ মানুষ বিএনপি, ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ জামায়াত ও ২ শতাংশ মানুষ এনসিপিকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। অর্থাৎ আট মাস পর বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থন কিছুটা কমেছে আর এনসিপির সমর্থন সামান্য বেড়েছে।
এছাড়া কাকে ভোট দেবেন এমন প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ। গত বছরের অক্টোবরে এই সংখ্যা ছিল ৩৮ শতাংশ। কাকে ভোট দেবেন, তা বলতে চাননি ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ মানুষ। আর ভোট দেবেন না বলেছেন ১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
জরিপে গত অক্টোবরে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেটি এখন কমে হয়েছে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর বাইরে জাতীয় পার্টির ভোট শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ, অন্যান্য ইসলামি দলের ভোট ২ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে নেমেছে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশে।
অবশ্য আপনার নির্বাচনী এলাকায় কোন দলের প্রার্থী জিতবে বলে মনে হয়—এমন প্রশ্নে ৩৮ শতাংশ মানুষ বিএনপির কথা বলেছেন। ১৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন জামায়াত ও ১ শতাংশ এনসিপির কথা বলেছেন। আর আওয়ামী লীগের কথা বলেছেন ৭ শতাংশ মানুষ।
অনুষ্ঠানে জরিপের ফল তুলে ধরে বিআইজিডির ফেলো অব প্র্যাক্টিস সৈয়দা সেলিনা আজিজ জানান, জরিপের জন্য গ্রাম ও শহরের নানা শ্রেণি-পেশার ৫ হাজার ৪৮৯ জন মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। তাদের ৫৩ শতাংশ পুরুষ, ৪৭ শতাংশ নারী, ৭৩ শতাংশ গ্রামের ও ২৭ শতাংশ শহরের।
জরিপে দেখা যায়, ৬৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এনসিপি সম্পর্কে জানেন বা অন্তত নাম শুনেছেন। তবে তরুণদের দল গঠনকে সমর্থনের প্রশ্নে মতবিরোধ ছিল। ৪৫ শতাংশ সমর্থন জানিয়েছেন, প্রায় সমান ৪৬ শতাংশ সমর্থন করেননি এবং ৯ শতাংশ কোনো মন্তব্য করেননি। দলের টিকে থাকার সম্ভাবনা নিয়েও মতভেদ স্পষ্ট। ৩৮ শতাংশ মনে করেন, দলটি রাজনৈতিক ময়দানে টিকে থাকতে পারবে; ৩৬ শতাংশের মতে, তা সম্ভব নয়; আর ২৬ শতাংশ এ বিষয়ে নিশ্চিত নন বা মন্তব্য করতে চাননি।
বিআইজিডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা এনসিপি’র সম্ভাবনায় আশাবাদী, তাদের অনেকেই জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব, নতুন চিন্তা, ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা, সাহস ও সততাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, যারা দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে, তাদের প্রধান যুক্তি অভিজ্ঞতার অভাব, নেতৃত্বের ঘাটতি, ভোটারদের অনাস্থা, রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি ও সাংগঠনিক দুর্বলতা।
তাদের মতে, এনসিপি নিয়ে জনগণের মনোভাব এখনও মিশ্র। নতুন নেতৃত্ব ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা একদিকে ইতিবাচক সাড়া জাগালেও, অভিজ্ঞতা ও সাংগঠনিক সক্ষমতার ঘাটতি পূরণ না হলে রাজনৈতিক বাস্তবতায় দলটির টিকে থাকা কঠিন হতে পারে।
তরুণ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলগুলোর ভবিষ্যৎ টিকে থাকা নিয়েও জনমতে স্পষ্ট বিভাজন দেখা গেছে। জরিপে দেখা গেছে, যারা এসব দলকে টিকে থাকতে দেখছেন, তাদের মধ্যে ২৭ শতাংশ মনে করেন- দলগুলোর নতুন ও উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তিই তাদের এগিয়ে নেবে। ২৫ শতাংশ বলছেন- জুলাই বিপ্লব থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব তাদের দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখবে। ২৪ শতাংশ বিশ্বাস করেন- ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা এই দলগুলোর প্রতি সমর্থন জোগাবে। এছাড়া ২৩ শতাংশ সাহস এবং ২০ শতাংশ সততাকে প্রধান শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, যারা মনে করছেন এসব দল টিকতে পারবে না, তাদের ৫৩ শতাংশ অভিজ্ঞতার অভাবকে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ১৮ শতাংশ যোগ্য নেতৃত্বের ঘাটতি এবং ১৫ শতাংশ ভোটারদের আস্থাহীনতা বা জনসমর্থনের অভাবকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি ও সাংগঠনিক দুর্বলতাকেও অনেকেই বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এমএইচ/