পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় প্রায় দুই মাস ধরে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার কারণে স্থানীয় হাজারো মানুষ দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন। সরকারি-বেসরকারি অফিসের কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হয়েছে, প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে এবং জরুরি ও অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন সেবা প্রায় বন্ধপ্রায় হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আগে রবি মোবাইল নেটওয়ার্কে অগ্রগামী ছিল, কিন্তু গত দুই মাস ধরে তাদের নেটওয়ার্ক কার্যত বন্ধ হয়ে আছে। অন্যদিকে, গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়। অধিকাংশ মোবাইল টাওয়ারে নেই যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জেনারেটর কিংবা সোলার সুবিধা। পূর্বে রবির টাওয়ারগুলো নিয়মিত মেকানিকদের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ হতো এবং জেনারেটরে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হতো, কিন্তু বর্তমানে এসব তদারকি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ফলে টাওয়ারগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে এবং মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, রামগড় উপজেলার গোড়াউনটিলা, নাকাপা, পাতাছড়া, সম্প্রুপাড়া, বলিপাড়া ও হাতিরখেদা এলাকায় রবি কোম্পানির ৫টি, গ্রামীণফোনের ১টি এবং টেলিটকের ৩টি মোবাইল টাওয়ার রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ২ নম্বর পাতাছড়া ও ১ নম্বর রামগড় ইউনিয়নের টাওয়ার বন্ধ থাকলেও রামগড় পৌরসভার কেন্দ্রীয় টাওয়ারগুলো সচল ছিল। তবে গত তিন-চার দিন ধরে উপজেলায় সব টাওয়ারের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে।
মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর সার্ভিস নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তারা সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টাওয়ার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জানান, চাঁদার দাবিতে আঞ্চলিক সশস্ত্র দলের হামলা-তৎপরতার কারণে নেটওয়ার্কের অবস্থা খারাপ হয়েছে। গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল টাওয়ারে হামলা, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, অগ্নিসংযোগ ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও, রবির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিল সংক্রান্ত জটিলতা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে টাওয়ারের রক্ষণাবেক্ষণ বন্ধ রয়েছে।
রবি টাওয়ারের কেয়ারটেকার এক ব্যক্তি জানান, মাসখানেক আগে ইউপিডিএফ পরিচয়ে দুই উপজাতি ব্যক্তি মোটরসাইকেলে এসে জানিয়ে গেছেন, তাদের অনুমতি ছাড়া টাওয়ারে কোনো কাজ করা যাবে না।
রামগড় ইউনিয়নের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী দিদারুল আলম অভিযোগ করেন, প্রায় এক মাস ধরে সব মোবাইল অপারেটরের টাওয়ার থেকে নেটওয়ার্ক সরবরাহ বন্ধ থাকায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
পল্লি চিকিৎসক ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, আধুনিক যুগে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় জরুরি সেবাসহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিপদ বা জরুরি মুহূর্তে কেউ কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না।
রামগড় উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার (আইসিটি) ও রামগড় ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেহান উদ্দিন জানান, দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে ইউনিয়নে নেটওয়ার্ক নেই। সদরে গত তিন-চার দিন ধরে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। অফিসিয়াল ও ব্যক্তিগত কাজকর্মে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় টাওয়ার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী শামীম বলেন, নেটওয়ার্ক সমস্যার বিষয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ আমরা পেয়েছি। মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এসএকে/