মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫ ।। ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১৮ সফর ১৪৪৭


নৈশ মাদরাসা যাত্রাবাড়ী ঢাকা’র সবক উদ্বোধন অনুষ্ঠান সম্পন্ন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| কাউসার লাবীব ||

আল্লামা শামসুল হক রহ. মাদরাসা কর্তৃক পরিচালিত নৈশ মাদরাসা যাত্রাবাড়ী ঢাকা’র নতুন শিক্ষাবর্ষের সবক উদ্বোধন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।

বুধবার (১ মে) মাগরিবের নামাজের পর এই সবক উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরু হয়ে চলে রাত ১১ টা পর্যন্ত। এতে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সিনিয়র কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষক, আল্লামা শামসুল হক রহ. মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুরব্বি হাফেজ মাওলানা কারী সায়ীদুর রহমান।

সবক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন জামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর ঢাকার মুহতামিম মাওলানা রশীদ আহমাদ, জামিয়া আবু বকর সিদ্দীক রা. যাত্রাবাড়ী ঢাকা’র প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মুফতি বোরহান উদ্দীন রাব্বানী, মাদরাসাতুদ দাওয়া মিরপুর-১০ ঢাকা’র নাযেমে তালিমাত মুফতি রবিউল হক ও আল্লামা শামসুল হক রহ. মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মাহমুদ হাসান।

আলোচনায় মেরাজনগর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা রশীদ আহমাদ নৈশ মাদরাসার শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করে বলেন, বয়স্ক হয়ে যারা ইলম শিখতে আসে তারা সাহাবায়ে কেরামের নকশ কদমের অনুসারী। কেননা অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম বয়স্ক হয়ে ইলম শিখেছেন। আপনারা যারা নৈশ মাদরাসায় ভর্তি হয়ে ইলম শিখছেন আপনাদের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।

মুফতি বোরহান উদ্দীন রাব্বানী বলেন, ছোটদের জন্য কিন্তু ইলম শেখা ফরজ না। কিন্তু যারা শরিয়তের মুকাল্লাফ, বয়স হয়েছে, নামাজ-রোজা ফরজ হয়েছে; তাদের জন্য কিন্তু ইলম শেখা ফরজ। কেননা ইলম না শিখে আমল করলে সেই আমল সহিহ হবে না।অনেক সময় দেখি মানুষজন নামাজ পড়ছে কিন্তু নামাজ হচ্ছে না। সেজদা হচ্ছে না, রুকু হচ্ছে না, এমনকি সুরা-কেরাতও শুদ্ধ না। এটা খুবই আফসোসের বিষয়।

তিনি বলেন, আসলে ‘নৈশ মাদরাসা’ গতানুগতিক কোনো মাদরাসা নয়। এটি একটি আন্দোলন। আলহামদুলিল্লাহ এই আন্দোলন দিন দিন বেগবান হচ্ছে। নানা কারণে ছোটবেলায় যারা ইলম শিখতে পারেনি তারা দ্বীন-ধর্ম শিখছে, ইলম শিখছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় আমাদের দেশের শতভাগ মুসলমান ইলমওয়ালা মুসলমান হবে।

মুফতি রবিউল হক উপস্থিত নৈশ মাদরাসার শিক্ষার্থী ও শ্রেুাতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই জীবনে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার অন্যতম মাধ্যম হলো ইলম শিখে সেই অনুযায়ী আমল করা। আল্লামা শামসুল হক রহ. মাদরাসা আপনাদের সঙ্গে নিয়ে সেই কাজটিই করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সাধারণত অনেক ধরণেরই দ্বীনি প্রোগ্রাম হয়ে থাকে। কিন্তু বয়স্কদের দ্বীনি শেখানোর এমন প্রোগ্রামগুলো সত্যিই প্রশংসনীয়। মুসলমানের সন্তান কিন্তু শুদ্ধভাবে দোয়া-কালাম জানেনা, নামাজ-রোজা জানেনা। এটি মানার মতো না। সহ্য করার মতো না। নৈশ মাদরাসার মাধ্যমে দ্বীন না জানা ভাইয়েরা দ্বীন শিখছে, এটি ভালো লাগার বিষয়।

মুফতি রবিউল হক আহলে কুরআনসহ নানা ফেতনা বিষয়ে উপস্থিতিদের সচেতন করে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা শেষ করেন।

আল্লামা শামসুল হক রহ. মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মাহমুদ হাসান বলেন, মুরব্বিদের নির্দেশে এই নৈশ মাদরাসার যাত্রা শুরু হয়। আলহামদুলিল্লাহ এই মাদরাসা এখন প্রথম বর্ষ থেকে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত উপনীত হলো। এটি সত্যিই গর্বের, আনন্দের। আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. এর নামে গড়া এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেন এই মুরব্বির নাম বিক্রি করে খাওয়া না হয়, সঠিক দ্বীন-ইসলাম যেন প্রচার করতে পারি সেই দোয়া চাই আপনাদের কাছে।

তিনি দোয়া চেয়ে বলেন, কেরাণীগঞ্জে আমাদের আল্লামা শামসুল হক রহ. মাদরাসার নিজস্ব জায়গার ব্যবস্থা হয়েছে। আমরা সেখানে চলে গেলেও যেন এখানে নৈশ মাদরাসা চালু থাকে সেজন্য এখানেও নিজস্ব জায়গার প্রয়োজন। আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা ও দোয়া আমাদের পথচলা সহজ করবে।

অনুষ্ঠানে নৈশ মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও তাদের হৃদয় বিগলিত অনুভূতি উপস্থাপন করেন। আল্লামা শামসুল হক রহ. মাদরাসার কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান বড়দের দ্বীন শেখানোর এমন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।

প্রসঙ্গত, স্কুল-কলেজ, ভার্সিটির ছাত্র, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী ও কর্মব্যস্ত ভাইদের জন্য ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছে এই নৈশ মাদরাসার । এক কথায় যারা আলেম নন কিন্তু ইলমে দ্বীন শিখতে আগ্রহী তাদের জন্য এ প্রচেষ্টা।

নৈশ বিভাগের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা যায়, যে সকল ভাইদের ছোটবেলা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয়নি, তাদেরকে খোদাভিরু, দ্বীনদার, পরহেজগার বানানো  ও ফরজ পরিমাণ দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া এবং আলেম হিসেবে গড়ে তোলাই একমাত্র লক্ষ্য উদ্দেশ্য।

নৈশ বিভাগের বৈশিষ্ট্য-

*৭ বছরে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন।
*সপ্তাহে ৫ রাত ক্লাস (মাগরিবের পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত)
*কওমী সিলেবাসের মৌলিক কিতাবগুলো পাঠদান।
*কুরআনুল কারীমের তরজমা ও তাফসীর অধ্যয়নে সক্ষমতা তৈরি।
*হাদিসে নববীর অনুবাদ ও ব্যাখ্যা অধ্যয়নে যোগ্যতা অর্জন।
*আরবি ও উর্দু ভাষায় রচিত কিতাব অধ্যয়নে যোগ্য করে গড়ে তোলা।
*বেফাক ও হাইয়াতুল উলইয়া এর অধীনে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ।
*প্রয়োজনে থাকা খাবার সুব্যবস্থা।
*প্রতিমাসে আত্মশুদ্ধিমূলক ইসলাহী মজলিসের সুব্যবস্থা

যাতায়াত: যাত্রাবাড়ী বড় মাদ্রাসা থেকে ২০০ গাজ দক্ষিণে

প্রয়োজনে যোগাযোগ: ০১৭১৫ ৩৮৪৯৭৬ (মুহতামিম) ০১৯১৯ ১৯৫২২৮ (অফিস)

কেএল/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ