|| আবদুল্লাহ বিন আলমগীর ||
ঈদুল আজহা মুসলিমদের জন্য এক খুশির দিন। একই সাথে জিলহজ মাস আরবী মাসসমূহের মধ্যে অন্যতম। এই দিন এবং মাসটির সাথে ইসলামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান জড়িত। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান হলো আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা। বিষয়টি কেবল সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং এটি একটি মহান ইবাদত। এতে রয়েছে তাকওয়া ও ইখলাসের একটি মহান পরীক্ষা। কোনআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَنۡ یَّنَالَ اللّٰہَ لُحُوۡمُہَا وَلَا دِمَآؤُہَا وَلٰکِنۡ یَّنَالُہُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ
অর্থাৎ, এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। (সূরা হজ, আয়াত - ৩৭)
১০ জিলহজ সুবহে সাদিক থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত, যে সকল প্রাপ্তবয়স্ক, বোধসম্পন্ন ও স্বাধীন পুরুষ-মহিলা ঋণমুক্ত এবং নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, তাদের উপর কোরবানি করা ওয়াজিব।
যে পশুর কোরবানি জায়েজ :
গৃহপালিত উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা এগুলোর মধ্যে নর-মাদী উভয়টি দ্বারাই কুরবানী জায়েজ, এগুলো ব্যতীত অন্য কোন গৃহপালিত প্রানী যেমন - হাঁস, মুরগী এবং বন্যপ্রাণী ও বন্য গরু দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না।
কুরবানির পশুর বয়স কত হবে?
উট কমপক্ষে পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু, মহিষ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে। ছাগল ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে এক বছরের হতে হবে। ৬ মাস ঊর্ধ্ব বয়সের ভেড়া ও দুম্বা যদি এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে এক বছর বয়সের মতো মনে হয়, তাহলে তা দ্বারাও কোরবানি করা জায়েয হবে। ছাগলের বয়স এক বছরের কম হলে তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েয হবে না। (ফাতাওয়ায়ে কাযীখান : ৩/৩৪৮, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী : ৫/২৯৭)
গর্ভবতী পশু কোরবানি জায়েয।তবে প্রসবের সময় আসন্ন, এমন পশুর কোরবানি করা মাকরূহ।
আর গর্ভবতী পশু কোরবানি করার পূর্বে যদি বাচ্চা প্রসব করে, তাহলে বাচ্চা জীবিত সদকা করবে, কিংবা এর সাথে বাচ্চাকেও কোরবানির দিন জবাই করে বাচ্চার গোস্ত সদকা করা ওয়াজিব। তবে জীবিত সদকা করা উত্তম।
আর গর্ভবতী পশু কোরবানির নিয়তে জবাইয়ের পর বাচ্চা জীবিত বের হলে কোরবানির সময়সীমার মাঝে সেটাও জবাই করে মা ও বাচ্চা উভয়টির গোস্তই খেতে পারবে। কিন্তু সময়সীমার মাঝে বাচ্চা জবাই না করলে পরবর্তীতে বাচ্চাটিকে জীবিত সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব। (ফাতাওয়ায়ে কাযীখান : ৩/৩৬৭-৩৫৪-৩৫০)
উল্লেখ্য, বলদ গরু ও বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। এছাড়া খাসিকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী করা উত্তম। পাগল পশুর কুরবানী জায়েয। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, কোনো খাবার খেতে চায় না, তাহলে তা দ্বারা করবানী জায়েয নেই। জবাইয়ের জন্য পশু শোয়ানোর সময় পা ভেঙ্গে গেলে কিংবা চোখে আঘাত লেগে চোখ নষ্ট হয়ে গেলেও কোরবানী করা জায়েজ। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী : ৫/২৯৭-২৯৮-২৯৯, বাদাইউস সানায়ে : ৬/৩১২-৩১৩)
লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ ঢাকা
এমএইচ/