মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫ ।। ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১৮ সফর ১৪৪৭


‘বায়তুল্লার মুসাফির’ একটি হৃদয়ছোঁয়া বিস্ময়কর সফরনামা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

||মুহাম্মদ মিজানুর রহমান||

ছোটবেলায় আমি ভীষণ বই পড়ুয়া ছিলাম। যা পেতাম তা-ই পড়তাম। দেশি-বিদেশি গল্প, উপন্যাস, থ্রিলার, সায়েন্স ফিকশন—বাছ-বিচার ছিল না খুব একটা। আর ছিলাম ভীষণ রকম আবেগী! মাঝে মধ্যেই বই পড়তে পড়তে চোখ ভিজে উঠত, কখনো অশ্রু গড়িয়েও পড়ত! সবাই অবাক হয়ে বলতো, সিনেমা দেখে মানুষ কে কাঁদতে দেখেছি, কিন্তু বই পড়ে এভাবে কেউ কাঁদে? আমি কাঁদতাম! তবে সেটা হয়তো একটা বই পড়ার সময় দুচারবার! কিন্তু পরিণত বয়সে কিছুটা দ্বীনের বুঝ পাওয়ার পর আবু তাহের মিছবাহর ‘বায়তুল্লার মুসাফির’ পড়ার সময় এত কেঁদেছি, এতবার কেঁদেছি! প্রতিবার চোখের জল শুকাবার আগেই তা আবার গড়িয়ে পড়েছে! অবিরাম ঝরঝর কান্না যাকে বলে! তখন সদ্য বিবাহিত এই আমাকে দেখে বউটা হয়তো পাগল ভাবতে শুরু করেছিল! প্রিয় পাঠক, বইটা আসলেই আমাকে পাগল করে দিয়েছিল, বায়তুল্লার পাগল!

আবু তাহের মিছবাহর ‘বায়তুল্লার মুসাফির নিয়ে এক লাইনে যদি মূল্যায়ন করি, তাহলে বলব-গ্রন্থের প্রতিটি শব্দ যেন একেকটি কবিতা, প্রতিটি লাইন যেন একেকটি স্বতন্ত্র গল্প, আর প্রতিটি অধ্যায় যেন একেকটি উপন্যাস, সর্বোপরি পুরো সফরনামাটিই পাঠকের জন্য এক চরম বিস্ময়! শব্দের এমন ঠাসবুনোট, ভাষার এমন যাদু, বর্ণনার এমন চমক, পাঠের এমন মোহ আমি আর কোনো গ্রন্থে পাইনি! ‘বায়তুল্লার মুসাফির’ তাই আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সফরনামা! আমি বিশ্বাস করি এই সফরনামা লেখার সময় স্বয়ং দয়াময় আবু তাহের মিছবাহর হাত হয়ে গিয়েছিলেন। কাগজের পাতায় কলম চলেছে দয়াময়েরই ইশারায়! এছাড়া এমন বিস্ময়কর গ্রন্থ কারও পক্ষেই লেখা সম্ভবপর নয়। আমার কাছে বইটি নিঃসন্দেহে আসমানী এলেমের এক বাস্তবিক উদাহরণ!

পাঠক, ‘বায়তুল্লার মুসাফির’ এমন একটি হৃদয়ছোঁয়া সফরনামা, যা শুধু হজযাত্রার গল্প নয়—বরং আত্মার জার্নি, চোখে দেখা অনুভব আর অন্তরে গাঁথা স্মৃতির এক মর্মস্পর্শী বর্ণনা। লেখক একজন তালিবে ইলম হিসেবে হজের অভিজ্ঞতাকে নিছক তথ্য বা পর্যটনের খেরোখাতা বানাননি, বরং প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি জায়গার সাথে যুক্ত করেছেন আত্মিক অনুভব ও ঈমানি বার্তা।

বইয়ের ভাষা সহজ, সাবলীল ও আবেগময়। কখনো তা পাঠককে হাসায়, আবার কখনো চোখ ভিজিয়ে দেয়, চোখ ভাসিয়ে দেয়। বিশেষ করে প্রথমবার কাবা শরিফ দেখা, আরাফাতের দিন, মিনার রজনী বা কঙ্কর নিক্ষেপের সময়ের অনুভবগুলো লেখক যে দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছেন, তা পাঠককে এক অনন্য অভিজ্ঞতার জগতে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, গ্রন্থটির পরতে পরতে পাঠকের জন্য অপেক্ষা করছে অফুরন্ত বিস্ময়! শব্দের সুমধুর খেলাতো আছেই, আছে মুগ্ধ জাগানিয়া ঘটনার ঘনঘটা!

এই বই নবীন কিংবা সম্ভাব্য হজযাত্রীদের জন্য যেমন দিকনির্দেশনামূলক, তেমনি যে কেউ এটি পড়লে অন্তরে হজের আকাঙ্ক্ষা জন্মাতে বাধ্য। লেখক হজের বাহ্যিক দিক নয়, অন্তরের বিপ্লব তুলে ধরেছেন। আমার যদি সঙ্গতি থাকতো তাহলে প্রত্যেক মুসলিমের হাতে ‘বায়তুল্লার মুসাফির’ তুলে দিতাম। কিংবা যারা হজে যাবেন, আমি তো মনে করি তাদের জন্য গ্রন্থটি অবশ্য পাঠ্য। আর যারা হজের স্বপ্ন দেখেন, কিন্তু সঙ্গতি নেই, তাদের ‘বায়তুল্লার মুসাফির’ দেবে অলৌকিক এক স্বাদ!

‘বায়তুল্লার মুসাফির’ কেবল একটি হজ সফরের গল্প নয়—এটা একজন মুসলিমের আল্লাহর পথে আত্মসমর্পণের ডায়েরি। যারা হজ করেছেন, তারা স্মৃতি রোমন্থন করবেন; আর যারা করেননি, তাদের অন্তরে হজের ডাক জাগবে নিঃসন্দেহে। গ্রন্থটি প্রত্যেক মুসলমানের সংগ্রহে থাকা দরকার।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ