মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান
বিয়ে মানবজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও ধর্মীয় অধ্যায়। এটি শুধু দুটি মানুষের বৈধ সম্পর্কই নয়, বরং দুটি পরিবার, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সংমিশ্রণ। তবে সময়ের সাথে সাথে সমাজে বিয়ের ধরণে এসেছে নানা বৈচিত্র্য—ভিন্ন জাতি, ধর্ম, বয়স, অর্থনৈতিক শ্রেণি বা এমনকি প্রযুক্তি নির্ভর সম্পর্ক গড়েও অনেকে এখন বিয়ে করছেন। এসব বিচিত্র বিয়ের পেছনে রয়েছে ভালোবাসা, আত্মত্যাগ, কৌতূহল কিংবা কখনও সমাজের প্রচলিত নিয়ম ভাঙার সাহস। এসব বিয়ের গল্প যেমন আমাদের ভাবায়, তেমনি সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিয়ের অনুষ্ঠানে কিছু অদ্ভুত ও ব্যতিক্রমধর্মী রীতি প্রচলিত রয়েছে, যা স্থানীয় সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের প্রতিফলন।
১. ফিজি: তিমির দাঁত দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব
ফিজিতে, পাত্রকে কনের বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সময় একটি তিমির দাঁত (tabua) উপহার দিতে হয়। এটি সম্মান ও শুভকামনার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
২. চীন: কাঁদার রীতি
চীনের তুজিয়া সম্প্রদায়ে, কনে বিয়ের এক মাস আগে থেকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে কাঁদেন। দশ দিন পর তার মা, এরপর দাদি ও অন্যান্য নারী আত্মীয়রা যোগ দেন। এটি সুখ ও ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়।
৩. কেনিয়া: কনেকে থুতু দিয়ে আশীর্বাদ
কেনিয়ার মাসাই সম্প্রদায়ে, কনের বাবা তার মেয়ে ও জামাতার মাথায় থুতু দিয়ে আশীর্বাদ করেন। এটি সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
৪. স্কটল্যান্ড: ‘ব্ল্যাকেনিং’ রীতি
স্কটল্যান্ডে, বিয়ের আগে কনে ও বরকে বন্ধুরা হঠাৎ ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের ওপর ময়লা, ডিম, আটা ইত্যাদি ছুঁড়ে দেন এবং শহরজুড়ে ঘোরান। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, এই অপমান সহ্য করতে পারলে দাম্পত্য জীবনের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হবে।
৫. বর্নিও: বিয়ের পর তিন দিন টয়লেট ব্যবহার নিষেধ
বর্নিও দ্বীপের কিছু সম্প্রদায়ে, নবদম্পতিকে বিয়ের পর তিন দিন ঘর থেকে বের হতে বা টয়লেট ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, এই রীতি দাম্পত্য জীবনে সৌভাগ্য বয়ে আনে।
৬. ফ্রান্স: টয়লেট থেকে পানীয় পান
ফ্রান্সের এক পুরনো রীতিতে, বিয়ের পর অতিথিরা বিয়ের অনুষ্ঠানে বাকি থাকা পানীয় মিশিয়ে একটি পাত্রে দেন, যা দেখতে টয়লেটের মতো। নবদম্পতিকে এটি পান করতে বলা হয়, যা তাদের শক্তি ও সাহসের প্রতীক।
৭. জাপান: সাকে ভাগাভাগি
জাপানে, বিয়ের সময় বর-কনে ও তাদের পরিবার তিনটি সাকে কাপ থেকে তিনবার করে সাকে পান করেন। এটি দুই পরিবারের একত্রীকরণের প্রতীক।
৯. হাঙ্গেরি: কনেকে বিক্রি
হাঙ্গেরিতে, বিয়ের অনুষ্ঠানে একজন অতিথি ঘোষণা দেন, “কনে বিক্রি হচ্ছে!” এরপর অতিথিরা টাকা দিয়ে কনের সঙ্গে নাচেন। শেষে বরকে কনেকে ‘ছিনিয়ে’ নিতে হয়।
১০. ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া: মানব গালিচা
ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার মার্কেসাস দ্বীপে, বিয়ের পর কনের আত্মীয়রা মাটিতে শুয়ে পড়েন, এবং নবদম্পতি তাদের ওপর দিয়ে হাঁটেন। এটি তাদের সম্মান ও ঐক্যের প্রতীক।
এই রীতিগুলো বিভিন্ন সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের প্রতিফলন, যা প্রতিটি সমাজের নিজস্বতা ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।
এমএইচ/