|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||
বিশ্ব এখন এক বৈচিত্র্যপূর্ণ সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে সঙ্গে মানবতা বারবার প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে – বিশেষত যখন কোথাও নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়, শিশুর কান্না স্তব্ধ হয়ে যায় বোমার শব্দে, এবং বিশ্ব সমাজ নীরব বসে থাকে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে আজ, ৭ এপ্রিল ২০২৫, অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এক বৈশ্বিক ধর্মঘট, যার মূল প্রতিপাদ্য গাজায় চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সংহতি প্রকাশ।
গাজা উপত্যকায় বহু মাস ধরে চলমান সংঘর্ষ, নির্বিচারে বোমাবর্ষণ, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা এবং হাজার হাজার নিরীহ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বিশ্ববিবেক। এই পরিস্থিতিতে গাজার মানুষ নিজেরাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জাগিয়ে তুলতে আহ্বান জানিয়েছে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের— ধর্মঘটের। এই আহ্বানে বিশ্বের নানা প্রান্তের সচেতন মানুষ, শিক্ষার্থী, মানবাধিকারকর্মী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সাড়া দিচ্ছে।
বাংলাদেশেও এই ধর্মঘটের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে সোচ্চার হয়েছেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা, মানববন্ধন এবং শান্তিপূর্ণ মিছিলের। রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনগুলোও নিজ নিজ অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এই ধর্মঘট কেবল একটি দিনের কর্মসূচি নয়; এটি হচ্ছে এক ধরণের নৈতিক অবস্থান গ্রহণ। এর মাধ্যমে বিশ্বের মানুষ দেখাতে চায় যে মানবতা আজো বেঁচে আছে, এবং যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরকারগুলো নীরব থাকে, তখন জনতার কণ্ঠ গর্জে ওঠে। গাজার শিশুরা, নারীরা ও সাধারণ মানুষ যেন বুঝতে পারে যে তারা একা নয়, বিশ্বের কোটি কোটি হৃদয় তাদের জন্য ব্যথিত।
এই ধরনের বৈশ্বিক ধর্মঘট ভবিষ্যতের গণপ্রতিরোধের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। যখন বিশ্ব রাজনীতি ব্যর্থ হয়, তখন নাগরিক সমাজ, শিক্ষার্থী ও তরুণরাই হয়ে ওঠে পরিবর্তনের অগ্রদূত। গাজার প্রশ্নে এই ধর্মঘট শুধু একটি প্রতিবাদ নয়, এটি এক ধরণের আন্তর্জাতিক সংহতির প্রকাশ, যেখানে ধর্ম-বর্ণ-ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে মানবতা এক কণ্ঠে আওয়াজ তোলে।
আজ ৭ এপ্রিল ২০২৫-এর ধর্মঘট প্রমাণ করে দিবে, বিশ্ববাসী এখন আর নিরব দর্শক নয়। গাজা হোক বা অন্য যে কোনো নিপীড়িত অঞ্চল— মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে প্রস্তুত। এই প্রতিবাদ হোক শান্তিপূর্ণ, কিন্তু দৃঢ় ও স্থায়ী প্রভাবসঞ্চারী।
এমএম/
                              
                          
                              
                          
                        
                              
                          