মুফতি এনায়েতুল্লাহ
সব কাজের কাজী, মারাত্মক লেভেলের বুদ্ধিমান ও কী-বোর্ড যোদ্ধারা সামগ্রিক সচেতনতার দিকে এগিয়ে না গিয়ে স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এরা কারা? এরা আসলে আমি, আমরা। আমরা স্রোতে এমনভাবে ভাসতে চাই, যেখানে বিভিন্ন বিষয়ের শিকার হলেও আমাদের বিরোধিতার সুর ক্রমেই কমে আসছে, ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ হচ্ছে দাবি। এমতাবস্থায় নিজের মতো চিন্তার অধিকারী কারও চেঁচিয়ে ওঠাকেই ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে দেখতে পছন্দ করি। স্বার্থের জন্য সব জটিলতাকে এক পাশে সরিয়ে নিজের রাস্তা করে নিতে পারি। সমস্যাটা এখানেই।
আগে রাজনৈতিক তরজা চললেও একসময় কোথাও না কোথাও এক থালায়, এক দস্তরখানে বসতে পারতাম, যুক্তির প্রেক্ষিতে উঠে আসত বিপরীত যুক্তি। এতসব রোদেলা বিকেল, গভীর রাত, স্নিগ্ধ ভোর পেরিয়ে জীবন চলছিল, মন্দ না; ভালোই চলছিল।
কিন্তু এখন? এখন চাপা একটা উত্তেজনা, ভেতরে ভেতরে অস্থিরতা, জেদ, ল্যাং মারার চিন্তা, গ্রুপ-উপ গ্রুপ করে টিকে থাকা, কাউকে মাইনাস করার কাল চলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সত্যিই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি তো?
ভাবা যায়, কোন সময়টায় আমরা বসবাস করছি! রাজনৈতিক আলাপে দ্বিমত, আলাদা বাক্সে ভোট ফেলা ও দলীয় ট্যাগ ভিন্ন হওয়ায় পরস্পরে কথা নেই, মুখ দেখা বন্ধ করেছে দুই বন্ধু, দুই ভাই, দুই আত্মীয়, দুই স্বজন- এমন ঘটনা অনেক ছড়িয়ে আছে। এটা তো হওয়ার ছিল না।
রাজনীতিবিদরা তো একটা যৌথ পরিবার। কোনও এক জোৎস্না রাতে যৌথযাপনে এক থালায় ভাত খাবার স্বপ্নও দেখছেন হয়তো আমাদেরই কেউ কেউ। মানে, সকলে মিলে বাঁচা।
সেখানে কেন ‘কু ও কুটিলতা’র বাড়-বাড়ন্ত থাকবে? থু-থু ওপরে ছুড়তে নেই, এতে নিজের গায়ে এসে লাগে। তারপরও এই অভ্যাস ছাড়তে পারছি না। এই প্রবণতার ফলে খানিকটা হলেও রাজনীতির পরিসরে অসুস্থ রাজনীতি সহজ হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত দল ভাঙছে, জোটের ফিতে আলগা হচ্ছে, রণনীতি বদলে যাচ্ছে; সফলতা ধরা দিচ্ছে না। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে উন্মাদনা, কাঁদা ছোড়াছুড়ি, পক্ষ ভারী করার নোংরা কৌশল। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বাংলাদেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন রয়েছে। সবাই শান্তির বাতাবরণে যুক্তির বৈপরিত্য, চিন্তার বিরোধিতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে। পদের জন্য লড়াই হবে, ভোটের জন্য যুদ্ধ হবে- এগুলো মানিয়ে নিতেই রাজনৈতিক পথের সারথী হয়েছি, সেখানে বন্ধুত্বের বাতাবরণে নিজেদের মধ্যে মহাযুদ্ধ কেন? এমন স্তব্ধতা নিয়ে কেমনে সমাজ বদলানোর কথা বলব?
আমার, হ্যাঁ; আমার আপনার সবার দরকার সত্যটার মুখোমুখি হওয়া। মুখে এক বাইরে ভিন্ন রূপ, মস্তিষ্কে এক সূত্র রাজপথে ভিন্ন সমীকরণ সূত্রে কেউ এগুতে পারবে না। একটু সত্যের মুখোমুখি হোন, বলয়টা ছেড়ে বের হোন, মাঠের লোকের কথা শুনুন- দেখবেন কীভাবে উঠে আসছে আত্মশ্লেষ, প্রশ্ন। যার উত্তর সোজাসাপ্টা কিছু নেই, তবু আছে সূত্র। যে সূত্র ধরে এগিয়ে গেলে মিলত বদলানোর পথ। এখন প্রশ্ন হলো, সেই পথ কি আপনি আসলেই সন্ধান করছেন?
অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪ ডটকম
এমএইচ/