রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫ ।। ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ২ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য: ইবনে শাইখুল হাদিস ৪-৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা পরস্পরের জীবনসঙ্গী হিসেবে সফলতার মন্ত্র ফখরুলের ‘দক্ষিণপন্থীদের উত্থান’ মন্তব্যে কড়া সমালোচনা ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিবের পি আর পদ্ধতিতেই জবাবদিহিতামূলক সরকার কায়েম হবে: পীর সাহেব চরমোনাই  প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠক বেফাকের ৪৯তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষার নিবন্ধনের কাগজপত্র বিতরণ শুরু বাসচাপায় মাদরাসা ছাত্রী নিহত, সড়ক অবরোধ একা পারছি না, বিভিন্ন পর্যায়ে আলেমদের অংশগ্রহণ জরুরি: ধর্ম উপদেষ্টা জুলাই সনদে মাদরাসা ছাত্রদের স্বীকৃতিও দিতে হবে: গাজী আতাউর রহমান

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন: একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি ও বাস্তবতাবিবর্জিত


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
সংগৃহীত

তাওহীদ আদনান ইয়াকুব

সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে নানা মহলে আলোচনা
চলছে। প্রথম দৃষ্টিতে এটি একটি ‘উন্নয়নমুখী’ ও ‘অধিকারবান্ধব’ দলিল মনে হলেও, গভীর
বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয় যে, এতে অনেকগুলো সুপারিশ বাস্তবতাবিবর্জিত, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি
অসংবেদনশীল এবং পশ্চিমা চিন্তার অন্ধ অনুকরণের প্রতিফলন। নিচে উক্ত প্রতিবেদনের কিছু
সমস্যা তুলে ধরা হলো।

১. ধর্মীয় অনুশাসনকে পাশ কাটানো: একটি অশুভ প্রবণতা

প্রতিবেদনের অনেক সুপারিশ এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যাতে ধর্মীয় বিধান ও সামাজিক রীতিকে
‘ব্যাকডেটেড’ এবং ‘বাধা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরাধিকার আইন, তালাক ও
খোরপোষ বিষয়ক প্রস্তাবগুলো স্পষ্টত ইসলামী পারিবারিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যার সংবিধানে ইসলামের
মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে ইসলামী পারিবারিক আইন দীর্ঘদিন ধরে সমাজে কার্যকর
রয়েছে এবং তা সামাজিক স্থিতিশীলতার অন্যতম স্তম্ভ। এই আইনের কাঠামো ভেঙে দিয়ে
তথাকথিত ‘সমতা’র নামে নারী-পুরুষের দায়িত্বগত পার্থক্যকে উপেক্ষা করলে তা এক ভয়ংকর
সামাজিক বিশৃঙ্খলার জন্ম দেবে।

২. নারীকে পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী রূপে চিত্রায়ন: সামাজিক ভারসাম্যের জন্য হুমকি

প্রতিবেদনটি এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তৈরি, যেখানে নারীকে পুরুষের ‘সমতুল্য প্রতিযোগী’ হিসেবে
উপস্থাপন করা হয়েছে, ‘সহযোগী ও পরিপূরক’ হিসেবে নয়। এই মনোভাব পাশ্চাত্য সমাজে পারিবারিক
কাঠামো ধ্বংসের অন্যতম কারণ। এখন সেটাই কি বাংলাদেশে আমদানি করা হবে?
নারীকে কর্মক্ষেত্রে পাঠিয়ে, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে, ‘স্বাধীনতা’র নামে সামাজিক দায়বদ্ধতা
থেকে মুক্ত করে দিলে সমাজে মা, স্ত্রী, কন্যা—এই পরিচিতিগুলোর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে। পরিবার
ভেঙে যাবে, সন্তানরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়বে, আর সমাজ হবে আত্মকেন্দ্রিক, বিচ্ছিন্ন এবং
অনিরাপদ।

৩. বাস্তবতা উপেক্ষা করে তৈরি করা আইন কার্যকর হয় না

কমিশনের অনেক প্রস্তাব বাস্তবতা ও গ্রামীণ সমাজব্যবস্থাকে বিবেচনায় নেয়নি। শহরের শিক্ষিত
শ্রেণির জীবনযাত্রার মানকে কেন্দ্র করে প্রস্তাব করা এসব সংস্কার বাংলাদেশ নামক বিস্তৃত ও
বৈচিত্র্যময় সমাজ কাঠামোর জন্য উপযুক্ত নয়।
যেমন, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা হবে—এটা বলা হয়েছে, কিন্তু এতে কীভাবে নারীর
নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে, যৌন হয়রানি ও সম্মানের অবক্ষয় রোধ করা হবে—তা স্পষ্ট নয়।
আবার, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কেবল বয়স নির্ধারণ করলেই সমাধান হয় না। অনেক ক্ষেত্রে
বয়সসীমা পেরোলেও মানসিক পরিপক্বতা থাকে না, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বয়স কম হলেও
পরিস্থিতি অনুযায়ী বিয়ে প্রয়োজন হতে পারে। এ বিষয়ে শরিয়তের ‘মসালেহ’ ভিত্তিক (উপকারমূলক
ও বাস্তবমুখী) নীতিকে অগ্রাহ্য করে একরৈখিক আইন আরোপ করলে তা উল্টো ক্ষতির কারণ হতে
পারে।

৪. নারীবাদী মতবাদকে নীতির মূলে বসানো: পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি

প্রতিবেদনটিতে স্পষ্টত একরকম নারীবাদী (ফেমিনিস্ট) চেতনার প্রতিফলন দেখা যায়, যেখানে
পুরুষকে নারীর অধিকারের ‘হরণকারী’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে এবং নারীর উন্নয়ন বলতে
বোঝানো হয়েছে—পুরুষের ভূমিকাকে পিছনে ফেলে নারীর সামনে এগিয়ে যাওয়া।
অথচ ইসলাম নারীকে আলাদা স্বতন্ত্র মর্যাদা দিয়েছে, পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়, বরং
নিজ নিজ ভূমিকায় সেরা হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। নারীর শিক্ষা, কর্ম, নিরাপত্তা, সম্পত্তির
মালিকানা—সবকিছুই ইসলামে নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রয়োজন শুধু শরিয়তসম্মত বাস্তবায়নের।
কিন্তু কমিশনের এই রিপোর্টে ইসলামী দৃষ্টিকোণ অনুপস্থিত, বরং এমন ধারার প্রস্তাব দেওয়া
হয়েছে, যা ভবিষ্যতে পশ্চিমা সংস্থাগুলোর প্রেসার গ্রুপ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

৫. সংস্কারের নামে বিভ্রান্তি ছড়ানো

যে সংস্কার সমাজকে সুন্দর করে তোলে, তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। কিন্তু সংস্কারের নামে যদি
ধর্মীয় বিধান নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়, পরিবারব্যবস্থাকে দুর্বল করা হয়, নারীকে বাজারের পণ্যে
পরিণত করা হয়—তাহলে তা সংস্কার নয়, বিভ্রান্তি।
ইসলাম নারীকে নিরাপত্তা দেয়, মর্যাদা দেয়, কিন্তু দায়িত্বহীন স্বাধীনতা দেয় না।
ইসলাম ‘ন্যায়’-এর কথা বলে, ‘সমতা’র নামে গোঁজামিল দেয় না।
ইসলাম পরিবারকে সমাজের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করে, তাকে ভেঙে স্বাধীনতার নামে ছন্নছাড়া করতে
চায় না।

ইসলামবিদ্বেষী সংস্কার নয়, ইসলামী দৃষ্টিকোণেই রয়েছে নারীর মুক্তি

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন স্পষ্টত পক্ষপাতদুষ্ট, বাস্তবতা-বিবর্জিত এবং
ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি অসম্মানজনক। দেশের স্থিতিশীলতা, পারিবারিক কাঠামো ও সামাজিক
মূল্যবোধ রক্ষার স্বার্থে এ ধরনের রিপোর্ট বাতিল করে নতুনভাবে, ইসলামী ও সামাজিক
বাস্তবতার আলোকে নারীর উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার রূপরেখা তৈরি করাই এখন সময়ের
দাবি।

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ