রবিবার, ২৫ মে ২০২৫ ।। ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২৭ জিলকদ ১৪৪৬


জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে : নজরুল ইসলাম খান


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্থায়ী সরকার বা নির্বাচিত সরকার নয়। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত, জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।

শনিবার (২৪ মে) বিকেলে বগুড়া সেন্ট্রাল হাই স্কুল (কেন্দ্রীয় ঈদগাহ) মাঠে তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম খান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনার অভিজ্ঞতা আছে।

কিন্তু আপনাদের তো দেশের যাবতীয় আইন ও বিধি সংস্কারের দায়িত্ব জনগণ দেয়নি। গণতন্ত্র রক্ষায় জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কেবল জাতীয় নির্বাচন করার জন্য আপনাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এর বেশি কিছু নয়।’
তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ডানপন্থী, বামপন্থী, মধ্যডানপন্থী ও মধ্যবামপন্থী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে জুলাই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। বিগত ১৬ বছর দেশে গণতন্ত্র ছিল না।

দেশের সব স্তর ভেঙে ফেলা হয়েছে, সেগুলো ঠিক করতে হবে।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, গণতন্ত্রের জন্য বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (বীর-উত্তম) জীবন দিয়েছেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি অবস্থায় সর্বোচ্চ নির্যাতন সহ্য করেছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারুণ্যের শক্তি তারেক রহমান মিথ্যা মামলায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গণতন্ত্র রক্ষায় জীবন বাজি রেখে বিএনপি বারবার আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে।


জুলাই আন্দোলনের শপথ যদি আমরা ধরে রাখতে না পারি, তাহলে সব কিছুই বৃথা হয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস, আজকের এই তরুণরা কখনো তা হতে দেবে না। কারণ তারা অনেক বেশি সচেতন ও সক্রিয়। সর্বোপরি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বৃষ্টিভেজা আজকের এই দিনে তরুণদের উপস্থিতিতে সৃষ্টি মহাসমাবেশই জানান দিয়েছে তারুণ্যের উদ্যম ও শক্তি সম্পর্কে।
মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘ড. ইউনূস অভিজ্ঞ মানুষ, কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদে নাতির বয়সী কিছু মানুষকে যুক্ত করায় কিছু ভুল হয়ে যাচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকার বাংলাদেশে। তরুণদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।’ 
ড. ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আপনারা তো কোনো দিন বৈশাখের রোদে বা শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভিজে কখনো আন্দোলন করেননি, আমরা বিএনপি দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেছি। সুতরাং আপনারা সংস্কার করার কেউ নয়, সংস্কার করতে হলে জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে যাদের ক্ষমতায় বসাবে, তারাই দেশের স্বার্থে প্রয়োজনমতো সংস্কার করবে। এখন ক্ষমতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রয়েছে, তাহলে ‘মব জাস্টিজ’-এর কথা উঠছে কেন। পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট ও চুরি করেছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার। এখনো সেগুলোর দৃশ্যমান কোনো বিচার কার্যক্রম হয়নি।”

মহাসমাবেশের প্রধান বক্তা জাতীয়তাবাদী যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের ১২ কোটি তরুণদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তরুণরাই ভবিষ্যতে দলের মূল চালিকাশক্তি। তাই দেশে তরুণদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

মোনায়েম মুন্না বলেন, ড. ইউনুস সরকারের কেউ কখনো কোন আন্দোলনে ছিলেন না, বা তাদের আত্মীয়রাও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বিএনপি’র তরুণরা আন্দোলন করেছে, গুলি খেয়েছে, মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে, সুতরাং হিসেব করে কথা বলতে হবে। বিশেষ বক্তা জাতীয়তাবাদী সেচ্ছাসেবক দলের

সভাপতি এসএম জিলানী বলেন, কিছু কিছু মিডিয়া বা গণমাধ্যম বিএনপিকে নতুন সংগঠন এনসিপির মুখোমুখি করতে চেষ্টা করছে। ঐ সমস্ত মিডিয়াকে এক সময় জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাছির বলেন, এত বৃষ্টির পরেও লক্ষ লক্ষ তরুণের সমাবেশ প্রমাণ করে মানুষ বিএনপি’র প্রতি কতটা আস্থাশীল। মনে রাখবেন, বিএনপি মাটি ও মানুষের দল। এত সহজেই অন্যকোনো দলের সঙ্গে তুলনা করা ঠিক নয়। 

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, আমরা রাজপথের মানুষ, রাজপথেই থাকবো, আপনারা রাজপথের মানুষ নয়, পালানোর পথ পাবেন তো।

মহাসমাবেশের সভাপতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, জুলাই আগস্ট আন্দোলনের ঐক্য ধরে রাখতে হবে। ষড়যন্ত্র চলছে, ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। ছাত্রদল, যুবদল ও ছাত্রদল শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করে আন্দোলনে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছে। অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অনেক অন্যায় সহ্য করেছি, আর করবো না, খুনি হাসিনার পুলিশের গুলির সামনে গিয়েছি, কাউকে ঐক্য নষ্ট করতে দেবো না। ছাত্রলীগ ও তাদের সন্ত্রাসীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদল রাজপথ থেকে সরে যাবেনা।

যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মহাসমাবেশে বিএনপি’র উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, এম এ খালেক, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুল হাবিব দুলু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শাহীন শওকত, ফজলুর রহমান খোকন, আমিনুল ইসলাম, বগুড়া জেলা বিএনপি’র সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

দুপুর দুইটা থেকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ থেকে আগত বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৩ লক্ষাধিক নেতাকর্মী মহাসমাবেশ স্থলে প্রবেশ করতে থাকে। এ সময় নেতাদের বহনকারী বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস ও কারের কারণে শহরের ৪ দিকের প্রবেশপথ স্থবির হয়ে পড়ে। যানজটের কারণে মহাসমাবেশ মাঠে পৌঁছাতে অনেক নেতাকর্মীদের প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়েছে।

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ