আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: অবশেষে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা পাঠাতে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন জি২০ শীর্ষ নেতারা। তালিবানের হাতে ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর অর্থনীতির সঙ্গে মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে দেশটি। এখনও তালিবান সরকারকে লিখিত কোনও স্বীকৃতি দেয়নি কোনও দেশই।
এদিকে জাতিসংঘ সমানে আফগানিস্তানের মানবিক সংকট নিয়ে বলে আসছে। তাই এবারের জি২০ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, মানবিক সংকট এড়াতে জাতিসংঘের এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সহায়তা দেয়া হবে। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে, এই প্রক্রিয়াতে যুক্ত করা হবে তালিবানদের। এর কোন বিকল্প নেই বলে একমত হয়েছেন জি২০ নেতারা।
আফগান সঙ্কট নিয়ে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সের পর এমন সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আফগানিস্তানের জন্য ১০০ কোটি ইউরো দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।
বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্তে নেতারা একমত হয়েছেন যে, আফগানিস্তানে সহায়তা দিতে পারে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক। এখন পর্যন্ত বিদেশের ব্যাংকগুলোতে আফগানিস্তানের প্রায় ৯০০ কোটি ডলার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে রেখেছে আমেরিকা। ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির মতো সাহায্যদাতা এজেন্সিগুলো বলেছে, আফগানিস্তানে মানবিক সঙ্কট একেবারে শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। দেশটির অর্থনীতির শতকরা ৭৫ ভাগই বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।
কিন্তু ১৫ই আগস্ট তালিবানদের হাতে কাবুল দখল হওয়ার পর সেই সাহায্য উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী এবং জি২০-এর বর্তমান চেয়ার মারিও দ্রাঘি বলেছেন, 'জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে আফগানিস্তানে সহায়তা দেয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। তবে এই মানবিক সঙ্কট সমাধানে তালিবানদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রয়োজন হবে।
তবে এর অর্থ এই নয় যে, তালিবানদের সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। তালিবান মুখে যা বলে তার ওপর ভিত্তি করে নয়, তাদের কাজের বিচার করেই তাদেরকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করতে হবে।' পাশাপাশি অবশ্য দ্রাঘি বলেন, তালিবানদের যুক্ত না করে আফগানিস্তানে মানুষকে সাহায্য করা কঠিন।
মারিও দ্রাঘি বলেন, আফগানিস্তানের মহিলাদের জীবন এখন থেকে ২০ বছর পিছনে চলে গিয়েছে। দেশটিতে মানবাধিকার, মহিলাদের অধিকার, শিক্ষা এবং সবার অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠনে কোনওই প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। যদি তালিবান এসব বিষয়ে সফলতা দেখাতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে তাদেরকে বিভিন্ন দেশ স্বীকৃতি দেবে।
উল্লেখ্য, তালিবানদের কেন্দ্র করে বিশ্ব দু'টি শিবিরে বিভক্ত। একটি অংশ চাইছে তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হোক। অন্য শিবিরের দাবি, তালিবানদের শাস্তি দিতে হবে।
কিন্তু এসব বিষয়ে একটি সমঝোতার ইঙ্গিত মেলে মারিও দ্রাঘির কথায়। তিনি সহায়তা বিতরণে তালিবানদের সম্পৃক্ততার কথা বলেছেন। সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও এর মধ্য দিয়ে তালিবানদের উদার হওয়ার একটি সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। আফগানিস্তান থেকে আগস্টে তড়িঘড়ি করে সেনা প্রত্যাহার করে আমেরিকাসহ মিত্র দেশগুলি।
এরপর সেখানে এক ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এসব নিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বের ধনী দেশগুলোর সংগঠন জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করল। কিন্তু এতে যোগ দেননি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। তাঁরা প্রতিনিধি হিসাবে পাঠিয়েছেন বিদেশমন্ত্রীদের।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ছুটিতে থাকায় এই সম্মেলনে অংশ নিতে পারেননি। এদিকে, কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে আগামী ২০শে অক্টোবর মস্কোতে পাল্টা আফগানিস্তান বিষয়ক কনফারেন্সের আয়োজন করছে রাশিয়া। এতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে পাকিস্তান, ভারত, ইরান ও তালিবান নেতৃত্বকে।
মঙ্গলবার জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে আফগানিস্তানে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য অতিরিক্ত ৭০ কোটি ইউরো দেওয়ার ঘোষণা করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। আফগানিস্তান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ বলেছেন, দেশটি এমন একটি অবস্থায় আছে, যেখান থেকে তাকে পুনর্গঠন করা যায়। তা নাহলে দেশটি ভেঙে পড়বে।
নিউ ইয়র্কে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন ও নীতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদেরকে আফগানিস্তানের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগেই তাতে তরল অর্থায়নের উপায় খুঁজতে হবে। যদি আমরা তা না করতে পারি, আফগানদের এই ঝড়ের মধ্যে রক্ষা করতে না পারি, তাহলে বিশ্বকে শিগগিরই এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।
-এটি