উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে দগ্ধ হওয়া শিশুদের জীবন বাঁচাতে রক্ত দিতে ছুটে এসেছেন তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জনগোষ্ঠীর শতাধিক সদস্য।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কুড়িল বিশ্বরোড ও খিলক্ষেত এলাকা থেকে তারা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে জড়ো হন। তাদের উপস্থিতি সেখানে এক ব্যতিক্রমী মানবিকতার চিত্র তুলে ধরে।
এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দেন তৃতীয় লিঙ্গের সমাজকর্মী ঝিনুক সিকদার। তিনি বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি যে বার্ন ইউনিটে রক্তের তীব্র সংকট চলছে। খবর পেয়ে আমরা একযোগে ১০০ জন রওনা দিই, আরও শতাধিক আমাদের সঙ্গে আসছেন। আমাদের একটাই লক্ষ্য—দগ্ধ শিশুদের জীবন রক্ষা করা।”
জুমা নামের একজন জানান, এই উদ্যোগের পেছনে ছিলেন তাদের 'গুরু মা' পিংকি সিকদার। তিনি বলেন, “গুরু মা আমাদের ডেকে বললেন, ‘কে কে যাবে রক্ত দিতে?’ আমরা সবাই একসঙ্গে বলেছি, আমরা যাবো। মানুষ মানুষের জন্য, শিশুগুলো যেন বাঁচে।”
হাবিবা নামের এক সদস্য বলেন, “যত রক্ত প্রয়োজন হবে, আমরা দিতে প্রস্তুত। শিশুদের জীবনই সবচেয়ে বড় প্রার্থনা।”
তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি পলাশ বলেন, “জাতির সংকটকালে আমরা আগেও পাশে ছিলাম, এবারও আছি। মানুষের মাঝেই আমাদের জীবিকার উৎস—ওরা সুস্থ থাকলে আমরাও বাঁচি।”
চৈতি নামের আরেকজন বলেন, “এই সহমর্মিতা শুধু আমাদের না, সবার অনুপ্রেরণা হওয়া উচিত। মানবতার বন্ধনে সবাই এক হয়ে দাঁড়াক, সেটাই চাই।”
উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ জনই শিশু। নিহতদের মধ্যে একজন পাইলট ও একজন শিক্ষিকাও রয়েছেন।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান জানান, আহত অবস্থায় এখন পর্যন্ত ৭৮ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন, যাদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বার্ন ইউনিটে দুজনকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত ৬ জনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি, আর শনাক্ত হওয়া ২০ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চিকিৎসা ও পরিচয় শনাক্তে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এসএকে/