মুসাফাহা শব্দের অর্থ হাত মেলানো। ইসলামী পরিভাষায়, পারস্পরিক সাক্ষাতে সালাম বিনিময়ের পর একে অপরের সঙ্গে হাত মেলানোকে মুসাফাহা বলা হয়। এটি ইসলামের একটি সুন্নত আমল, যা পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ।
মুসাফাহার ফজিলত
হাত মেলানোর এই আমলটি শুধু সামাজিক রীতি নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে মহান ফজিলত। হাদিসে এসেছে—
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যখন দুইজন মুসলমান সাক্ষাৎ করে এবং তারা পরস্পরের সঙ্গে মুসাফাহা করে, আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে ও মাগফিরাত চায়—তখন আল্লাহ তাদের উভয়ের গুনাহ ক্ষমা করে দেন।”
(সুনানে আবু দাউদ: ৫১৬৯)
আবার আরেক হাদিসে এসেছে
আনাস (রা.) বলেন, নবিজি (সা.) বলেছেন:
“যখনই দুই মুসলমান পরস্পর সাক্ষাৎ করে এবং একে অপরের হাত ধরে, আল্লাহর ওপর তাদের দোয়া কবুল করার হক প্রতিষ্ঠিত হয়। এমনকি তাদের হাত আলাদা হওয়ার আগেই আল্লাহ তাদের উভয়কে ক্ষমা করে দেন।”
(মুসনাদে আহমদ: ১২৪৫১)
মুসাফাহার সময় পড়ার দোয়া
ওলামায়ে কেরাম মুসাফাহার সময় নিচের দোয়াটি পড়তে উৎসাহ দিয়েছেন:
يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ
উচ্চারণ: ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম
অর্থ: আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের ক্ষমা করুন।
মুহাদ্দিস শামসুল হক আজিমাবাদী (রহ.) ‘আউনুল মাবুদ’ ব্যাখ্যাগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, মুসাফাহার সময় আল্লাহর প্রশংসা এবং ইস্তিগফার করা (যেমন: এই দোয়াটি পড়া) মুস্তাহাব।
আরেকটি করণীয় দোয়া
‘ইবনুস সুন্নী’ গ্রন্থে বর্ণিত, নবিজি (সা.) মুসাফাহার সময় নিম্নোক্ত কোরআনি দোয়াটিও পড়তেন:
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্-দুনিয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল-আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া কিনা আযাবান-নার
অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দাও, আখেরাতেও কল্যাণ দাও এবং আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।
(সুরা বাকারা: ২০১)
ইসলামী সংস্কৃতিতে মুসাফাহার গুরুত্ব
মুসলিমদের সাক্ষাতে মাথা নত করা বা চুমু খাওয়া ইসলামী সংস্কৃতি নয়। বরং করমর্দন বা মুসাফাহা করাই ইসলামের শিক্ষিত রীতি। হাদিসে এসেছে—
একজন সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন:
“হে আল্লাহর রাসুল! আমরা যদি কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করি, তাহলে কি তার সামনে মাথা নত করব?”
তিনি বললেন: “না।”
“তাহলে কি তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাব?”
তিনি বললেন: “না।”
“তাহলে কি তার সঙ্গে হাত মেলাবো (মুসাফাহা করব)?”
তিনি বললেন: “হ্যাঁ।”
(সুনানে তিরমিজি: ২৭২৮)
মুসাফাহা শুধু সামাজিক সৌজন্য নয়, বরং এটি ইসলামের একটি বরকতময় আমল। এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়, পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় হয় এবং গুনাহ ক্ষমা হয়। তাই আমাদের উচিৎ—প্রত্যেক সাক্ষাতে মুসাফাহা করা এবং দোয়ার মাধ্যমে একে অপরের জন্য মঙ্গল কামনা করা।
এনএইচ/