মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫ ।। ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১৮ সফর ১৪৪৭


নির্বাচন নিয়ে আমরা আতঙ্কিত: মাওলানা গাজী আতাউর রহমান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র এবং গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা গাজী আতাউর রহমান সোমবার (১১ আগস্ট) গাজীপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিক হত্যা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছেন। 

সেখানে দেওয়া বক্তব্যে মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, আপনাদের সহকর্মী গত ৭ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। নিহত আসাদুজ্জামান তুহিন একজন নির্ভিক সাংবাদিক ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত, মর্মাহত। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এই ঘটনা কেবল গাজীপুরেই না বরং সারা দেশেই প্রচণ্ড ক্ষোভ ও নিন্দার জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবেও দেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অতিতের ন্যায় ৫ আগষ্টের পরেও সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কথা বলে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক ঘটনায় আমাদের অবস্থান জানানো এবং আপনাদের সাথে মতবিনিময় করার জন্য আজকের এই আয়োজন।

সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রশাসনের উদাসীনতা প্রসঙ্গে মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ঘটনার পরবর্তী করণীয় পালনে উদাসিনতা দেখিয়েছে। আট আগস্ট নিহত তুহিনের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে আমি ইমামতি করেছি। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম,  জানাজায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল ও সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক বা তার প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে নিহত সাংবাদিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। শোকাহত পরিবার ও সাংবাদিক সহকর্মীদের সহমর্মীতা ও সমবেদনা জানাবেন, মানুষকে আশ্বস্ত করবেন, সাংবাদিকদের অভয় দিবেন।  কিন্তু তারা কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এতে করে মনে হচ্ছে একজন সাংবাদিক হত্যায় তাদের কোন বিকার নাই। তারা নির্বিকার। 

হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিকের পরিবারের প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র বলেন, নিহতের দুইটা বাচ্চা আছে। বাবা-মা আছেন। স্ত্রী-পরিবার আছেন। নিহত তুহিনের সংসারে আয় করার মতো আর কেউ নাই।  এখন তার পরিবারে দায়-দায়িত্ব কে নেবে। সরকারের পক্ষ থেকে কেউ তাদের খোঁজ-খরব নেয় নাই। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি। 

তার অসহায় পরিবারকে এভাবে উপেক্ষা করার কারণে সাংবাদিকদের মধ্যে ভয় ও আতংক আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি মনে করি, সাংবাদিকদের ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে এই নৃশংসতা ঘটানো হয়েছে। এবং নিহত তুহিন ও তার পরিবারকে উপেক্ষা করার মাধ্যমে সরকার ও গাজীপুর প্রশাসন সেই ভীত-সন্ত্রস্ত করার কাজে অপরাধীদের সহায়তা করেছে। কারণ সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য কোন ব্যবস্থা করে নাই। অভয় দেয়া হয় নাই। আশ্বস্তও করা হয় নাই। আমরা দাবী জানাচ্ছি, তার পরিবারর দায়িত্ব নিতে হবে। তার পরিবারের কর্মসংস্থানের ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সার্বিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সাংবাদিক ভাইদের প্রতি আহবান করবো নিহত তুহিনের পরিবার যেনো ক্ষতিপূরণ পায় সেজন্য আপনারা দাবী উত্থাপন করুন। এবং ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করুন।

জিএমপি কমিশনারের বক্তব্যের সমালোচনা করে মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, রাষ্ট্র-প্রশাসন কিভাবে চলছে তা আমরা বুঝতে পারি না। জিএমপির কমিশনার একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। সেখানে তিনি দায় স্বীকার করলেও কিছু আপত্তিকর কথা বলেছেন। তিনি সন্ত্রাস ও ছিনতাই এর জন্য বেকরত্বকে দায়ী করে ঢালাওভাবে শ্রমিকদের দায়ী করেছেন। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি। গাজীপুরে পোষাক কারখানা বন্ধ হওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। এর সাথে শ্রমিকদের চাদাবাজীতে যুক্ত হওয়ার কোন সম্পর্ক নাই। তার এই বক্তব্য আপত্তিকর। 

চাকরি হারানো শ্রমিকরা চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত বলে তিনি যে কথা বলেছেন তার ব্যাখ্যা তার দেয়া উচিৎ। কতজনের অপরাধের কারণে তিনি শ্রমিকদেরকে অভিযুক্ত করছেন তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। আমরা মনে করি, তিনি শ্রমিকদের হেয়-প্রতিপন্ন করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি তার ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। অপরাধীদের অপরাধকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছেন।  

গাজী আতাউর রহমান বলেন, চাঁদাবাজির পেছনে কারা আছে তাদের সামনে নিয়ে আশা দরকার। এখানে মাদকের কারণে নৈরাজ্য হয়, অনাচার-ব্যবিচার হয়। প্রশাসন তা জানে। কিন্তু তার প্রতিকারে প্রশাসনের কোন উদ্যোগ নাই। আমরা গাজীপুরকে নিরাপদ করতে চাই। বরং সারাদেশকেই নিরাপদ করতে চাই। জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে একটা নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনের জন্য। আমরা এগুলো আর দেখতে চাই না। সেজন্য সকলের সহযোগিতা দরকার। সম্মিলিত কাজ দরকার।

তিনি সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সাংবাদিকদের সাথে আছে। তারা আতংক তৈরি করার জন্য এমন নৃশংসতা করেছে। আমরা যদি আতংকিত হই তাহলে ওদের উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে। তাই নির্ভিকভাবে দায়িত্ব পালন করুন।

ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কোন রাজনৈতিক দলকে শেল্টার দিবেন না। গাজীপুরে যে অভিযান শুরু হয়েছে তা যেনো কেবল এই খুনেই সীমাবদ্ধ না থেকে সামগ্রিক অপরাধ দমনে কাজ করে সেই আহবান জানাবো। অপরাধীদের হাতে থাকা অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। আমরা আতংকিত যে, এই অস্ত্র হয়তো আগামী নির্বাচনে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে। এই আশংকা নিয়ে তো নির্বাচন করা যায় না। সেনাবাহিনী মাঠে থাকার পরেও এই ধরণের অপরাধের পরে তো আমরা আশাহত হই। তাই সকল অপরাধীদের আটক করতে হবে। এবং তাদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। 

আদালতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালত এখন শুধুই জামিন শুনানি করে। তারা বিচারের কাজের চেয়ে জামিন শুনানিতেই ব্যস্ত। তাদের আচরণ দেখলে মনে হয় আদালতের কাজ বিচার করা না বরং অপরাধীদের জামিন দেয়া। এটা তো হতে পারে না। তাই আটক অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গাজীপুর মহানগর এর সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মাদ ফাইজ উদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা এম এ হানিফ সরকার, সহ-সভাপতি মাওলানা হাবিবুর রহমান মিয়াজী, অধ্যক্ষ মাওলানা শহিদুল ইসলাম, সেক্রেটারি মুফতী হুসাইন আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক, এইচ এম সাইদুর রহমান, প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক এইচ এম ওয়াহিদুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা রফিকুল ইসলাম মন্ডলসহ সহযোগী সংগঠনের নগর নেতৃবৃন্দ।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ