গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত নৃশংস অভিযানে অংশ নেওয়া আরও এক ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন। ইসরায়েল অধিকৃত সিরিয়ার গোলান মালভূমির একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে সোমবার তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সেনাটির মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে সামরিক পুলিশ। তবে তার পরিচয় কিংবা ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
ইসরায়েলি চ্যানেল ১২ জানায়, আত্মহত্যাকারী ওই সেনা ছিল নাহাল ব্রিগেডের সদস্য। গাজা যুদ্ধের একাধিক অভিযানেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।
গত ১০ দিনের মধ্যে এটি তৃতীয় আত্মহত্যার ঘটনা, যা নিয়ে ইসরায়েলজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে—বিশেষ করে রাজনৈতিক মহল ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।
ইসরায়েলি বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন,
“এক সপ্তাহে তিন সেনা আত্মহত্যা করেছেন। এটা এক দমবন্ধ করা বাস্তবতা।”
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১৫ জন সেনা আত্মহত্যা করেছেন। তবে গোপনীয়তার কারণে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
হারেৎজ পত্রিকার হিসাবে, গাজায় অভিযান শুরুর পর থেকে ৪২ জন সেনা আত্মহত্যা করেছেন। অন্যদিকে ইসরায়েল হায়োম জানায়, ২০২৪ সালেই ২১ জন সেনার আত্মহত্যার তথ্য রয়েছে তাদের কাছে।
মানসিক চাপ ও যুদ্ধ-পরবর্তী ট্রমার (PTSD) কারণেই সেনাদের আত্মহননের হার বাড়ছে বলে মনে করছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।
গত ৬ জুলাই সাফেদ শহরের কাছে এক জঙ্গলে রিজার্ভ বাহিনীর এক সদস্য গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তার ডায়েরিতে পাওয়া গেছে মানসিক অবসাদের ইঙ্গিত।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বর্বর অভিযানে ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
ওয়াফা বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও প্রায় ১১ হাজার মানুষ চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে গাজার বিরুদ্ধে পরিচালিত এই যুদ্ধকে "গণহত্যা" আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করছে বিশ্ব মানবাধিকার সংগঠনগুলো। আর সেই গণহত্যার অংশীদার হয়ে নিজের বিবেকের ভার সইতে না পেরে একে একে ঝরে পড়ছেন অনেক ইসরায়েলি সেনা—নিজের হাতেই নিজের জীবন শেষ করছেন।
এসএকে/