ইরান থেকে আফগান শরণার্থীদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আফগানিস্তান। এই পরিস্থিতিতে আফগান ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলভী আমির খান মুত্তাকি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন এবং শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন ধাপে ধাপে ও মর্যাদার সঙ্গে সম্পন্ন করার অনুরোধ জানান।
আলোচনায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন, আফগান শরণার্থীদের অধিকার লঙ্ঘন না করে তাঁদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ধীরে ও সম্মানজনকভাবে সম্পন্ন করা হবে।
আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জিয়া আহমেদ তাকাল জানান, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি ইরানে আফগান অভিবাসীদের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলছেন, প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়াটি যেন কোনোভাবেই অমানবিক না হয়। এতে শরণার্থীদের মর্যাদা রক্ষা পাবে।”
এদিকে, কাবুলের একটি অভিবাসী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া নির্বাসিত আফগানরা চরম দারিদ্র্য, খাদ্য সংকট, নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছেন।
ইরান থেকে নির্বাসিত বাজ মোহাম্মদ বলেন, “আমরা ১০০ আফগানি আয় করলে তা ইরানে ১৫০০ তোমান হয়। এটা আমাদের মাতৃভূমি, কিন্তু এখানে আমাদের জন্য কোনো সহায়তা নেই। আমরা ইসলামিক আমিরাতের কাছে অনুরোধ করছি—আমাদের জন্য কিছু করুন।”
এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের আফগানিস্তান প্রতিনিধি আরাফাত জামাল শরণার্থী বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে জানান, ইরান শিগগিরই একটি ত্রিপক্ষীয় কারিগরি বৈঠকের আয়োজন করতে চায়। এতে ইসলামিক আমিরাত, ইরান এবং ইউএনএইচসিআর অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুলমুত্তালিব হাক্কানি বলেন, “ইরান থেকে প্রবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সমন্বয়ের লক্ষ্যে কাবুলে এক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।”
এই সংকট মোকাবেলায় মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে কাবুলের বেসরকারি বাইজিদ রোশান বিশ্ববিদ্যালয় ইরান ও পাকিস্তান থেকে ফেরত আসা আফগান শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ণ একাডেমিক বৃত্তি ঘোষণা করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রফিউদ্দিন শহীদ বলেন, “অভিবাসীদের জোরপূর্বক বহিষ্কারের প্রতিবাদে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও শাখাগুলোতে আইন, অর্থনীতি, ফার্মেসি, প্রকৌশল ও শিক্ষাবিষয়ে শতভাগ বৃত্তি দিচ্ছি, যাতে তারা দেশেই উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায়।”
এর আগের দিন, শরণার্থী বিষয়ক কমিশন আফগান অভিবাসীদের প্রতি ইরানের ‘অমানবিক আচরণের’ নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দেয় এবং তেহরানকে কাবুলের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে শরণার্থী প্রত্যাবাসন পরিচালনার আহ্বান জানায়।
এনএইচ/