মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলো জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা পৃথিবী থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে নতুন একগুচ্ছ ছায়াপথের সন্ধান পেয়েছেন। এই আবিষ্কারটি মহাবিশ্বের গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, ‘কসমস ওয়েব’ নামে একটি মহাজাগতিক অঞ্চলে গবেষকরা দেড় হাজারেরও বেশি ছায়াপথ শনাক্ত করেছেন। এই গুচ্ছ ছায়াপথকে বিজ্ঞানীরা ছায়াপথের অন্যতম বৃহৎ সংকলন বলে মনে করছেন। এমন ঘনবসতিপূর্ণ ছায়াপথের অবস্থান ও বিন্যাস আমাদের সামনে মহাবিশ্বের আয়তন ও গঠন কাঠামো নিয়ে নতুন প্রশ্ন এবং উত্তরের সূত্র নিয়ে এসেছে।
এই গুচ্ছ ছায়াপথগুলোর মধ্যে রয়েছে ডার্ক ম্যাটার, উত্তপ্ত গ্যাস এবং বিশাল বিশাল কেন্দ্রীয় ছায়াপথ। এখানকার অনেক ছায়াপথেই অবস্থান করছে অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর, যা পুরো ছায়াপথের জীবনচক্র এবং গঠন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গবেষকরা মনে করছেন, এই জটিল মিথস্ক্রিয়াগুলো আমাদের মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির বিবর্তন, গোষ্ঠী ও ক্লাস্টার গঠনের পেছনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারে। এছাড়া এই আবিষ্কার মহাবিশ্বের সবচেয়ে পুরনো কাঠামোগুলোর অস্তিত্ব এবং তাদের আচরণ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য এনে দিতে পারে।
এই নতুন ছায়াপথগুচ্ছ শুধু মহাকাশ গবেষণায় নয়, পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলেই আশাবাদ বিজ্ঞানীদের।
ফিনল্যান্ডের আল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী গাসেম গোজালিয়াসল জানান, “আমরা মহাবিশ্ব গঠনের প্রারম্ভিক সময়ের কিছু গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণে সক্ষম হয়েছি। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬৭৮টি গ্যালাক্সি গ্রুপ বা প্রোটো-ক্লাস্টার শনাক্ত করা হয়েছে, যা সর্বোচ্চ এবং সবচেয়ে গভীরতম নমুনা।”
এই বিশাল নমুনা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা গত প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি বছরের গ্যালাক্সির বিবর্তন ও বিকাশের বিস্তারিত চিত্র পেতে সক্ষম হবেন। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের সাহায্যে খুবই ক্ষীণ ও দুর্লভ ছায়াপথগুলোও ধরা পড়ছে, যা মহাবিশ্বের প্রথম দিকে ছায়াপথগুলো কেমন ছিল তার সরাসরি প্রমাণ দিচ্ছে।
গোজালিয়াসলের মতে, এই প্রাথমিক গ্যালাক্সিগুলো এবং গ্যালাক্সি গ্রুপগুলোর পর্যবেক্ষণ আমাদের মহাবিশ্বের গঠনের রহস্য উন্মোচনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এই নতুন তথ্য ও গবেষণা শিগগিরই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস’ (A&A) এ প্রকাশিত হবে।
এই আবিষ্কার শুধু মহাকাশ বিজ্ঞানের জন্য নয়, আমাদের মহাবিশ্বের ইতিহাস ও ভবিষ্যত নিয়ে গভীর বোধগম্যতা তৈরিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
এনএইচ/