গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও ক্ষমতার নাটকীয় পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এসেছে শীতলতা। প্রায় এক বছর ধরে সম্পর্ক আশানুরূপ পর্যায়ে না পৌঁছালেও দিল্লির কিছু মহল মনে করে, পারস্পরিক অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দিলে সম্পর্ক আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বাংলাদেশের জন্য তিস্তার পানির ন্যায্য বণ্টন একটি স্পর্শকাতর ইস্যু। উভয় দেশ যদি এই দুই অগ্রাধিকারে সমঝোতায় পৌঁছায়, তাহলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অগ্রগতি সম্ভব।
অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটি অ্যান্টি-ইন্ডিয়া মনোভাব তৈরি হয়েছে, যা স্বাভাবিক করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। তার মতে, তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যুতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলেই সম্পর্কে ‘ম্যাজিক’ ঘটতে পারে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “ভারত কেন তিস্তা ইস্যুতে অগ্রগতি করেনি? চীনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পরও আমরা নিজেরা কি কোনো উদ্যোগ নিয়েছি?”
অন্যদিকে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও বাণিজ্যিক বাস্তবতাই দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের মূল চালিকা শক্তি হতে পারে। আগামী বছর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হবে, ফলে পুরোনো বাণিজ্য সুবিধা বাতিল হয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।
অর্থনীতিবিদ প্রবীর দে বলেন, “২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে বাংলাদেশের ভারতের সহায়তা প্রয়োজন।” তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৫ শতাংশ কার্গো যাবে বাংলাদেশের, বাকি ৬৫ শতাংশ নির্ভর করবে ভারতের উপর। কানেক্টিভিটি ও অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলোতেও ভারতের ভূমিকা অপরিহার্য।
পর্যবেক্ষকদের মতে, নিরাপত্তা ও পানি ইস্যুতে পারস্পরিক সমাধান এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো গেলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক আবারও পুরোনো গতি ফিরে পেতে পারে।
এসএকে/